Tuesday 21 January 2014

[সাতক্ষীরা থেকে নির্যাতিত এক বোনের চিঠি, পড়ুন শেয়ার করুণ]

[সাতক্ষীরা থেকে নির্যাতিত এক বোনের
চিঠি, পড়ুন শেয়ার করুণ]
"আপু,
ভালো আছেন আশাকরি।
আমাকে আপনি চিনবেন না। তবুও একান্ত
নিরুপায় হয়ে আজ আপনাকে লিখছি।
আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম
না কিভাবে এই কথাগুলো বলা যায়
এবং আদৌ ঠিক
হবে কিনা কিংবা আপনি বিরক্ত হন কিনা।
প্রতিদিন হয়ত অনেক মেসেজ
আপনি পেয়ে থাকেন তাই বিরক্ত হওয়াটাও
স্বাভাবিক। তবুও লাজ শরমের
মাথা খেয়ে আপনাকে একটা অনুরোধ করবো।
রাখতে পারবেন কিনা তা আমি জানিনা,
কিন্তু তবুও মনে ক্ষীণ আশা যদি আপনার
দয়া হয়।
তার আগে আমার কিছু
কথা বলে নিচ্ছিঃ আমি সাতক্ষীরার
মেয়ে। আমার বাবা ওখানে একটি পোষ্ট
অফিসের পোষ্ট মাস্টারের কাজ করেন।
আগে গ্রামের স্কুলে পড়াতেন। আমরা দুই
বোন, দুই ভাই। আমিই বড় ওদের মধ্যে।
ইন্টার মিডিয়েট পড়বার পর আমার
বাবা খুব শখ করে আমায়
ঢাকা ভর্তি করিয়ে দিতে আমার এক
মামকে অনুরোধ করেন এবং মামা মিরপুর
বাংলা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন।। আমার
ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট একটি ছিলো কেবল
মাত্র ছবি আপলোড করবার জন্য। এই
আইডি খুব নতুন করে তৈরি করেছি।
কিভাবে বাংলা লিখতে হয় সেটিও
শিখেছি। আমার এই আইডি নকল কিন্তু
আমি মানুষটি নকল নl l
যাইহোকl এখন আসল কথায় আসি।
আপনি নিশ্চই শুনেছেন কিছুদিন
আগে সাতক্ষীরার ঘটে যাওয়া ভয়ংকর সব
ঘটনা। আমি তখন
বেড়াতে গিয়েছি ঢাকা থেকে ওখানে।
আমরা ঘুনাক্ষরেও
বুঝতে পারিনি কি ঘটতে যাচ্ছে আমাদের
জীবনে! আমাদের এলাকা জামাত অধ্যুষিত।
কিন্তু আমার বাবা বা কেউই
আমরা জীবনে রাজনিতির সাথে জড়িত
ছিলাম নাl কোনদিনও না।
তবে মিথ্যে বলবনা, আমার
বাবা জামাতকে ভোট দিয়েছেন
এবং এরশাদ সাহেবকেও ভোট দিয়েছিলেন
আগে। বাবা কিন্তু জানেননা জামাতের
নেতা কারা, এরশাদ
যে স্বৈরাচারী উপাধি পেয়েছে এইসব।
বাবা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ ছিলেন যদিও
প্রাইমারি স্কুলের টিচার ছিলেন।
আমরা আসলে ওসব নিয়ে কোনদিন আলোচনাই
করিনি। নিজেদের সংসারের কলহ, আনন্দ
এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকতাম।
হঠাত করেই আমাদের পাশের বাড়ির
চাচা এসে আব্বাকে বলছিলেন,
আর্মি আসছে জামাতিদের ধরতে।
আব্বা তেমন কোন গুরুত্ব
না দিয়ে আলোচনা করতে লাগ্লেন ওই
চাচার সাথে। এর কিছুক্ষন পরেই
শুনতে পেলাম গুলির শব্দ, চেচামেচি,
আল্লাহু আকবর, গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ,
মহিলাদের কান্না, কেমন যেন
একটা অবস্থা!
আমরা প্রথমে ভেবেছি কোথাও ডাকাত
পরেছে কিংবা আগুন লেগেছে। চাচা আর
আব্বার সাথে আমার ১২ বছরের ভাইটিও
এক্সাইটেড হয়ে গিয়ে দৌড়ে উঠান
ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল। কিন্তু
আমাদের কার্নিশ
থেকে দেখা যাচ্ছে প্রচুর মানুষ জন এদিক
সেদিক পালাচ্ছে।
আমরা মেয়েরা ভয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
তখনও জানিনা ব্যাপারটি কি।
সাথে সাথেই দরজায় টোকা পড়তে লাগলো,
না খোলাতে এবার ধাম ধাম করে বারি শুরু
হল! আমি আর আমার সন্তান সম্ভবা ছোট
খালা খাটের নিচে ঢুকে গেলাম। আল্লাহ
তায়ালা মনে হয় মেয়েদের সিক্সথ সেন্স
অনেক স্ট্রং করে পাঠান। আমার ৫ বছরের
খালাতো ভাই ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করল।
আম্মা ওকে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন,
কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায়। আমাদের
কাঠের দরজা ভাঙতে খুব বেশি বেগ
পেতে হয়নি ওদের।
আমি চোখ বন্ধ করেছিলাম
না কি হয়েছিলো তা আর আমার মনে নেই।
শুধু ভাংচুরের শব্দ, কান্না, আর আমার
মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসছিলো,
বাবারে পায়ে ধরি , বাবা পায়ে ধরি,
বাবা আমরা নিরীহ, এইসব কথার আর্তনাদ।
খালাতো ভাইটাকে ধাক্কা মেরে দেয়ালে ঠেলে দেয়ার
পর আর কোন সাড়া শব্দ নেই ওর। একজনের
কণ্ঠ শুনলাম, ধুর ব্যাডা কি করস? দশ
বারোজন লোক কারও গায়েই ইউনিফর্ম
ছিলোনা। ওরা খাটের তোষক
উল্টে ফেলে দেয়। খালা আর
আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠি। ওরা এবার
খাটের নিচে উঁকি দিয়ে দেখে আমরা!
খালাটা ইতিমধ্যে অজ্ঞ্যান
হয়ে পড়ে আছেন। আমাকে ওরা টেনে বের
করে আমার কামিজ ধরে। আমি বলি, প্লিজ
ভাইয়া। আপনারা আমার ধর্মের ভাই
লাগেন, ভাইয়া প্লিজ। একজন বলে,
"এল্লা পিলিজ *দাইতাসে। খা** মা**
বান্ধ।" এই কথা বলেই চড় লাগিয়ে দেয়,
আমার মা দৌড়ে আসেন, তাকে চুলের
মুঠি ধরে চড় থাপ্পড় দেয়া হয়।
বাজে গালি দেয়া হয়। আমি ওদের চড়
খেয়ে দরজার কাছে ছিটকে পড়ি।
সাথে সাথেই এক দৌড়
দিয়ে বাইরে চলে আসি। কে আমার
পেছনে আসছে নাকি আমি কোথায়
যাচ্ছি তা বুঝতে পারিনি, কেবল
একটা কথাই মনে ছিল, দৌড়াতে হবে।
আমি একটা গয়াল ঘরের পেছনে আশ্রয় নেই।
চার ঘণ্টা আমি ওখানেই ছিলাম।
পড়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসি সব কিছু
ঠান্ডা হয়ে এলে। আমাদের
বাড়ি আমি চিনতে পারছিলামনা। কাঠের
স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। মহিলারা বিলাপ
করে কাঁদছে। বাবা তখনও বাসায়
ফেরেনি। আমার মাকে জড়ো করে অনেক
মহিলারা দাঁড়ানো। মা নিথর বসে আছেন
খালার লাশের সামনে। রক্তে খালার
শাড়ী ভিজে চুপচুপা। একটা বাড়িতেও কোন
পুরুষ ছিলোনা, কেউ ডাক্তারের
কাছে নিয়ে যায়নি খালাকে, সবার বাড়িই
ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, লুটপাট
করে নিয়ে গিয়েছে সব কিছু। সব কিছু।
অন্তত পক্ষে ৯ জন মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ
থেকে আসা একটি কাজের মেয়ে সহ
একি পরিবারের তিনজন
আছে এবং তারা ধর্ষিত হয়েছে পুলিশ
দ্বারা। আমাদের বাসায়
যারা এসেছিলো তারা পুলিশ ছিলোনা।
খাটো ও বখাটে ধাঁচের ছিল। ৬ জন
মারা গিয়েছে। অসংখ্য যুবক ছেলের হাত
নেই, পা নেই এরকম অবস্থা। গুলি খেয়ে,
চাপাতির কোপ খেয়ে অনেকে জখম। আর
বাড়িগুলো ভাঙ্গাচোরা স্তুপ। চার
পাঁচটা গরুর গায়েও গুলি লেগেছে।
একটা মৃত্যু পুরি। আমরা সাতদিন পর্যন্ত
সম্পূর্ণ খলা আকাশের নিচে রাত
কাটিয়েছি। আপনি কি জানেন,
একপরিবারের এক মেয়ের
জামাইকে সামান্য আঘাত
করে গর্তে ফেলে দিয়ে জীবন্ত
মাটি চাপা দিয়ে দেয়া হয়েছে?
বিশ্বাস হয় আপু ? হয়না তাইনা? হবে কেন?
কোন মিডিয়া যায়নি কাভার করতে, কিছু
ছেলেপেলে গিয়েছিলো মোবাইল
দিয়ে ভিডিও করতে, সবাই
মিলে তাড়িয়ে দিয়েছে ওদের। রাগে,
ক্ষোভে। সাতক্ষীরা অঞ্চলটি কি দেশের
বাইরে? আমরা কি মানুষ না আপু ?? আমাদের
কি ব্যাথা লাগেনা গুলি খেলে? ধর্ষিত
হলে? আমরা কি করেছি যে আমাদের এরকম
ভাবে নিঃশেষ করে দেয়া হল? আমার
বাবা এখন বাড়ি ফিরেছেন শুনেছি, কিন্তু
কথা বলতে পারেননা।
আমি ঢাকায় এসে অনেক সংবাদ পত্রের
অফিসে গিয়েছি, কেউ আমার
কথা শুনতে চায়নি। যে দু একজন
শুনেছে তারা বলেছে, ধৈর্য ধর। ব্যাস,
এটুকুই। আমরা মানুষ না তাইনা আপু ? আমার
মা ভাবছেন, আমার আর
বিয়ে দেয়া যাবেনা। লোকে কি বলবে?
আমরা কার কি ক্ষতি করেছি ভাই?
আমাদেরও ক্ষুধা লাগে, ব্যাথা লাগে যেমন
আপনাদের লাগে। আমরাও মানুষ। হয়ত
গরীব, দামি সাবান,
দামি প্রসাধনী ব্যাবহার করতে পারিনা।
পারফিউম দিয়ে গায়ের গন্ধ
ঢেকে রাখতে পারিনা, শুদ্ধ
ভাবে কথা বলতে পারিনা কিন্তু তারপরও
আমাদের জীবন আছে, আমার আর এখন
কান্না আসেনা। কিন্তু এত অসহায় লাগে।
আশে পাশের সব মানুষকে ভয়ংকর মনে হয়।
আপনার কাছে বলার একটাই উদ্দেশ্য ,
আপনি কি আমার এই কথাগুলো একবার আপনার
বন্ধুদের জানাবেন? আপনি বিদেশ থাকেন
বলে আপনাকে জানালাম যেন আপনার
ক্ষতি না হয় l আমাদের সন্মান আর আমাদের
জীবন আর ফিরে পাবনা জানি কিন্তু অন্তত
পক্ষে কিছু মানুষ জানুক , বিংশ
শতাব্দীতে কি বর্বর
ঘটনা ঘটে গিয়েছে আমাদেরি দেশে।"

Monday 20 January 2014

স্বাধীন’ সিকিম ও একজন লেন্দুপ দর্জি


লেন্দুপ দর্জি একটি আলোচিত নাম। আলোচিত চরিত্র। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস। ২০০২ সালে ভূষিত হন ভারতের ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে দেশের মানুষ সম্মানের সাথে ডাকত কাজীসাব বলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু শেষ জীবনে ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও তাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেঁচে ছিলেন ১০৩ বছর। দীর্ঘ দিন লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিঃসঙ্গ, নিন্দিত ও ভীতসন্ত্রস্ত জীবনযাপন শেষে লেন্দুপ দর্জি মৃত্যুবরণ করেন।  তার পুরো নাম কাজী লেন্দুপ দর্জি খাং শেরপা। জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালের ১১ অক্টোবর পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং এলাকায়। মারা যান ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই।
৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্বাধীন সিকিম এখন ভারতের দ্বিতীয় ুদ্রতম রাজ্য। আয়তন সাত হাজার ৯৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছয় লাখ সাত হাজার। সিকিমের ভূ-কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের উত্তরে চীন, পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে ভুটান ও দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। সিকিম-তিব্বত (চীন) বাণিজ্যপথ ‘না থুলা পাস’ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর সিকিমের কাছেই। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে সিকিমের অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে রাজধানী গ্যাংটকের দূরত্ব ৬৫৪ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বিদায়ের পর মনিপুর, ত্রিপুরা, কুচবিহারসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদান করে অথবা যোগদানে বাধ্য করা হয়।
 
ব্রিটেনের কাছে সিকিম স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল
সিকিমের স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চোগওয়াল। ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরুর আগে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ব্রিটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এ সময় রাজা ছিলেন নামগয়াল। কিন্তু ব্রিটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয়, ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাকে বন্দী করা হয়।
১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ১৯০৫ সালে ভারত সফরে এলে চোগওয়ালকে রাজার সম্মান দেয়া হয়। চোগওয়ালপুত্র সিডকং টুলকুকে অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করতে পাঠানো হয়। টুলকু নামগয়াল ক্ষমতায় বসে সিকিমের ব্যাপক উন্নতি করেন। ব্রিটিশের কাছে সিকিম তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল।
 
গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয়
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালে থাসি নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চোগওয়াল হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি কাজে লাগান লেন্দুপ দর্জিকে।
 
সিকিম ছিল ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্র
হিমালয়ের পাদদেশে ছোট্ট স্বাধীন দেশ সিকিমকে ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত করার বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে আনা হয় ১৯৭৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ওই বিল পাস হয় ৩১০-৭ ভোটে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই-এম) বিপক্ষে ভোট দেয়। এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের মে মাসে সিকিমকে পাকাপোক্তভাবে একটি অঙ্গরাজ্য করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ ভারতে সিকিম ছিল একটি আশ্রিত রাষ্ট্র।
স্বভূমিজাত লেপচা উপজাতীয়রা সিকিমের জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও পোশাক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তিব্বত থেকে ভুটিয়ারা ও নেপাল থেকে নেপালিরা এসে বসতি স্থাপন করে। সিকিমের তিনটি ভাষা এখন প্রধান-লেপচা, ভুটানি ও নেপালি।
চতুর্দশ শতক থেকে নামগিয়াল বংশ সিকিমে রাজত্ব করে আসছিল। প্রথম শাসক পুনটমং নামগিয়াল। ১৬৪২ সালে তাকে চোগিয়াল উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যার অর্থ ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করে যিনি রাজকার্য পরিচালনা করেন। সর্বশেষ চোগিয়ালকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ১৯৭৫ সালে।
 
প্রথমে ভারত প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয়
৭২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট্ট দেশটির রাজধানী গ্যাংটক। ১৮৮৬ সালে এক চুক্তির অধীনে সিকিম আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যোগ দেয়। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলে ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে ভারতের সাথে সিকিমের চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। চুক্তির অধীনে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনা দেখাশোনার পুরো কর্তৃত্ব ভারত নিয়ে নেয়।
চোগিয়াল ২৪ সদস্যের কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। এর মধ্যে ১৮ জন নির্বাচিত এবং ছয়জন চোগিয়াল মনোনীত। কাউন্সিলে তিনটি দলের প্রতিনিধি ছিলÑ ন্যাশনাল পার্টি, সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও সিকিম জনতা কংগ্রেস।
 
ভারতীয় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন চোগিয়াল
১৯৭৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলে। এই দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে তুমুল হতে থাকায় চোগিয়ালের অনুরোধে ভারতীয় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় যে, চোগিয়াল রাজনৈতিক সংস্কার মেনে নিতে রাজি আছেন। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ তিনি স্পষ্টই অনুধাবন করেন এই আন্দোলনের পেছনের শক্তি কে? পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে যে, আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল। সংস্কারে রাজি না হলে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। তাই সিকিমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার মোতাবেক ১৯৭৪ সালের জুন সিকিম রাষ্ট্র আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ওই আইনের অধীনে চোগিয়ালের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি হন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। অবশ্য আইন পরিষদে পাস হওয়া আইন অনুমোদনে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
 
সিকিম হত্যার উদ্যোগ নেন লেন্দুপ দর্জি 
রাজনৈতিক সংস্কার অধীন ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সিকিমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। দলটি আইন পরিষদের ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায়। দলের প্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি হন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এটাই চেয়েছিল। কারণ কাজী লেন্দুপ দর্জি তো তাদেরই লোক।
এই নির্বাচনের পর সিকিমকে ভারতকে অঙ্গীভূত করার প্রস্তুতি নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য একটা বৈধতার প্রলেপ দরকার। সেটা করে দেন কাজী লেন্দুপ দর্জি। ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন, ভারতের দুই পরিষদÑ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিকিমের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করেও সিকিমকে আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় রাখা যেতে পারে।
লেন্দুপ দর্জি যেহেতু ৩২টি আসনের ৩১টি আসনের নেতা, তার মতামতই তো সিকিম জনগণের মতামত। সুযোগটা হাতছাড়া করল না ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫০ সালের চুক্তি, যাতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়, তা বাতিল করল। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার বিল আনা হলো পার্লামেন্টে। এই বিল সম্পর্কে চোগিয়াল এক বিবৃতিতে বললেন, ‘সিকিমের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, যার নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ১৯৫০ সালের চুক্তিতে, তা সিকিম জনগণের সম্মতি ছাড়াই এবং অজ্ঞাতে ভারতের পার্লামেন্টে সিকিমের প্রতিনিধি নেয়ার ত্বরিত পদক্ষেপে অস্বীকার করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় চোগিয়াল বলেছেন, বর্তমান পদক্ষেপ, যা হবে ‘১৯৫০ সালের চুক্তির একপার্শিক বাতিলের শামিল এবং ভারতের সাথে সিকিমের একীকরণ।’
তিনি বলেন, ‘ভারত-সিকিম সম্পর্কের সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়া হয় ভারত প্রদত্ত সিকিমের অস্তিত্ব বজায় রাখার রক্ষাকবচের মাধ্যমে।’ তার এই বিবৃতিটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক আমৃতবাজার পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, সোমবার প্রকাশ করে।
 
চোগিয়ালের বার্তা ছিল অরণ্যে রোদন
চোগিয়ালের এই বার্তা অরণ্যে রোদনের শামিল। অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ফেলে সিকিমকে ভারতের অংশ করে নেয়া হলো। এ ঘটনায় ভারত তখন সারা বিশ্বে নিন্দাবাদ কুড়ায়। প্রতিবাদ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। প্রতিবাদে সিকিম দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু চীন ছাড়া জাতিসঙ্ঘের বেশির ভাগ সদস্যরাষ্ট্র সিকিমের এ পরিবর্তনকে দ্রুত অনুমোদন করে।
 
রাজতন্ত্র বিলোপ হয় বিনা বিরোধিতায়
নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটের ওপর ভর করে লেন্দুপ দর্জি নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা পান। চোগিয়াল আর লেন্দুপ দর্জির সাপে নেউলে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানচিত্র মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। কাউন্সিল অব মিনিস্টারের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জির ইচ্ছায় পার্লামেন্টে বিনা বিরোধিতায় রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক অবসান করা হয়। সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেন্দুপ দর্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার এবং স্টেটহুড স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন জানান। ১৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিমে ভারতীয় সেনাদের ছত্রছায়ায় এক গণভোট হয়। লেন্দুপের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখানো হয় সাজানো গণভোটের ফলাফলে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। মৃত্যু হয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৬ মে ১৯৭৫ সরকারিভাবে ভারত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং লেন্দুপ দর্জিকে করা হয় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। রাজতন্ত্রের পতনের ফলে ‘চোগিয়াল’ পদের অবসান ঘটে। একটি স্বাধীন দেশ হত্যা করে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী থেকে হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার সাথে সাথে তার দলও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস দলে বিলীন হয়ে যায়।
 
পুরো নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া হয় সামরিক অভিযান
সিকিমে ভারত সামরিক অভিযান শুরু করার আগে দেশটিতে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ইন্দিরা সরকার ভারতীয় বাহিনী পাঠানোর অজুহাত হিসেবে রাজার নিরাপত্তার কথা জানিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ কাজে তারা ব্যবহার করে লেন্দুপ দর্জিকে।
রাজতন্ত্র অবসানের পর সিকিম দখলে ভারতীয় সেনারা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। প্রকাশ্য দিবালোকে সামরিক ট্রাকের গর্জন শুনে সিকিমের চোগিয়াল দৌড়ে এসে দাঁড়ান জানালার পাশে। তিনি দেখেন, ভারতীয় সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলেছে। মেশিনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজপ্রাসাদের ১৯ বছর বয়সী প্রহরী বসন্ত কুমার ছেত্রি ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হন। আধা ঘণ্টার অপারেশনেই ২৪৩ প্রহরী আত্মসমর্পণ করে। বেলা পৌনে ১টার মধ্যেই ‘অপারেশন সিকিম’ শেষ হয়। প্রহরীদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় লড়াই করা যেত। কিন্তু রাজা ভুগছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তিনি আরেকটি সুযোগ হারালেন। বেইজিং ও ইসলামাবাদের কাছে জরুরি সাহায্য চাওয়ার জন্য রাজপ্রাসাদে ট্রান্সমিটারও বসানো ছিল। তিনি সাহায্য কামনা করে বার্তা পাঠালে চীনা সৈন্যরা প্রয়োজনে সিকিমে ঢুকে চোগিয়াল লামডেনকে উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু রাজা সেটাও করতে ব্যর্থ হন। আত্মসমর্পণকারী রাজপ্রহরীদের ভারতীয় সেনাদের ট্রাকে তোলা হয়। প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘ডেলা সিল লাই গি, গ্যাং চাংকা সিবো’ (আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক)। কিন্তু ততক্ষণে সিকিমের রাজপ্রাসাদে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভারতীয় জাতীয় পতাকা। নামগিয়াল সাম্রাজ্যের ১২তম রাজা চোগিয়াল লামডেন তখন প্রাসাদে বন্দী। 
বহির্বিশ্বের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, বি এস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে।
 
সিকিমের ঘটনা বিশ্বকে জানান এক মার্কিন পর্বতারোহী
ভারতীয় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করে দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু ততণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা হারানোর সময় সিকিম জাতিসঙ্ঘের সদস্য পদভুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
 
১৯৭১ সালেই সিকিম দখলের সিদ্ধান্ত ছিল ভারতের
চমকপ্রদ একটি বিষয় হলো সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ (একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান, ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভের গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অনেকের সাথে কথোপকথনে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক পরিচালক অশোক রায়না তার বই ‘ইনসাইড স্টোরি অব ইন্ডিয়াস সিক্রেট সার্ভিস’-এ সিকিম সম্পর্কে লিখেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু-নেপালি ইস্যু অন্যতম। সাংবাদিক সুধীর শর্মা লিখেন, লেন্দুপ দর্জি নিজেই শর্মাকে বলেছেন, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু-তিনবার তার সাথে দেখা করে পরামর্শ দিতেন কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে। তাদের এক এজেন্ট তেজপাল সেন এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে অর্থ দিয়ে যেতেন। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। শর্মা আরো লিখেছেন, এই ‘সিকিম মিশনের’ প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ‘র’।
 
দ্বৈত খেলা খেলেছে ভারত
ভারত সিকিমের ক্ষেত্রে দ্বৈত খেলা খেলেছে। চূড়ান্ত মুহূর্ত আসার আগে পর্যন্ত চোগিয়াল লামডেনকে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে দেয়নি। তারা তাকে বলেছে, সিকিমে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হবে। চোগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেল পদবিও প্রদান করা হয়েছিল। অপর দিকে লেন্দুপ দর্জিকে বলেছে, যেকোনো মূল্যে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে হবে। 
 
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি চোগিয়াল
ভারত অন্তর্ভুক্তির সময় সিকিমে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় দূত (পলিটিক্যাল অফিসার) বি এস দাস তার গ্রন্থ ‘ঞযব ঝরশশরস ঝধমধ’-এ লিখেছেন, ভারতের জাতীয় স্বার্থেই সিকিমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। চোগিয়াল যদি বিচক্ষণ হতেন এবং তার কার্ডগুলো ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা না হয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারত।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি সিকিমের চোগিয়াল। তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে করম চাঁদ গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর প্রতি ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল। ১৯৭৪ সালে সিকিমের তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই চোগিয়াল কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজা বীরেন্দ্র, সফররত চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী চেন লাই ইয়ান এবং পাকিস্তানি দূত চোগিয়ালকে সিকিমে না ফিরতে পরামর্শ দেন। ক্যাপ্টেন সোনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই তিন দেশের নেতৃবৃন্দ সিকিমকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে একটি মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন। কিন্তু চোগিয়াল লামদেন তাতে সম্মতি দেননি। এর কারণ তিনি নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি, ভারত সিকিম দখল করে নিতে পারে।
 
চীন সীমান্তে ৩ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর ছিল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ইন্দিরা গান্ধীর আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। কংগ্রেস নেত্রী নয়াদিল্লিতে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন। নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ছিল সিকিমের স্বাধীন সত্তার বিকাশ নিয়ে। ভুটানের পথ ধরে সিকিম যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ফেলত, তাহলে তা হতো নয়াদিল্লির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় রকম বাধা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে তিন হিমালয়ান স্বাধীন রাজ্য নেপাল, সিকিম ও ভুটান গায়ে গা লাগিয়ে অবস্থান করুক এটাও কৌশলগত কারণে দিল্লি নিরাপদ মনে করেনি।
 
লেন্দুপ দর্জির শেষ জীবন ছিল অভিশপ্তের
ভারতে যোগদানের পর লেন্দুপ দর্জি হন সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তবে স্বর্গসুখের যে খোয়াব তিনি দেখেছিলেন, সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তার দলের প্রতি জনগণের আস্থা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির এসএনসি একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে লেন্দুপ দর্জি দেখেন ভোটার তালিকায় তার নামটিও নেই। নেপথ্য শক্তি তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি টেনে দেয়।
সমকালীন ইতিহাসে সমালোচকদের কাছে লেন্দুপ দর্জি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তার সমর্থকেরাও পরবর্তী সময়ে তাকে ত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালে কালিমপংয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন লেন্দুপ দর্জি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলছে, আমি নাকি নিজের মাতৃভূমি সিকিমকে বিক্রি করে দিয়েছি। তা যদি সত্যও হয় সে জন্য কি আমি একাই দায়ী?’ কিন্তু এই অভিযোগ এতই গুরুতর ছিল যে, লেন্দুপ দর্জি আর কখনোই সিকিমে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারেননি। চাকুং হাউজে আমৃত্যু তাকে নিঃসঙ্গ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। তার মৃত্যু সিকিমবাসীর মনেও কোনো সহানুভূতি বা বেদনার উদ্রেক করতে পারেনি।
লেন্দুপ দর্জি মনে করতেন, কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিল্লি তাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার আক্ষেপভরা মন্তব্য, ‘সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।’ সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন, ‘আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপো করতে হয়।
 
ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত
ভারতের সিকিম দখলের বিরুদ্ধে চীন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিকিমের রাজপথে কোনো গণপ্রতিরোধ দেখা যায়নি। তাই বেইজিংয়ের ভূমিকা সীমিত ছিল জাতিসঙ্ঘে প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যেই। ১৯৭৭ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর টানা ১১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৭৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সিকিম সম্পর্কে মুখ খোলেন। তার মতে, সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এমনকি সিকিমের যেসব রাজনৈতিক নেতা ভারতে যোগদানের পক্ষে কাজ করেছিলেন, তারাও বলেছেন, এটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। কিন্তু তত দিনে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।
 
ভারতের রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি সিকিমের বড় অর্জন
ভারতের এ কাজকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সমর্থন না দিলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভুলটা এ ব্যাপারেই করলেন তাজউদ্দিন আহমদ। ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করলেন সিকিম সম্পর্কে এবং অজুহাত এসে গেল শেখ মুজিবের হাতে।
সিকিম সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্যটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর সোমবার দ্য অমৃতবাজার পত্রিকায়। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় সংবাদটি আসেনি।
ইংরেজি দৈনিক দ্য অমৃতবাজার পত্রিকার সেই খবর : ‘‘বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মি. তাজউদ্দিন আহমদ গত রোববার ‘ভারত-বাংলা বন্ধুত্ব বিনাশে বৃহৎ শক্তিবর্গের পাকানো’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য ভারতীয় জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে ঢাকা ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে স্বল্প বিরতিকালে মি. আহমদ রিপোর্টারদের বলেন যে, সিকিম ইস্যু নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। এসব জায়গায় কিছু সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে যে, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যক্তিগতভাবে মি. আহমদ মনে করেন যে, ভারতের একটি সহযোগী রাজ্য হিসেবে সিকিমের স্বীকৃতি ‘সিকিম জনগণের একটি অর্জন’।” এই ঘটনার কিছুদিন পর অবশ্য তাজউদ্দিন আহমদকে পদত্যাগ করতে হয়।
 
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আর সে ল্েয ভারত চায় এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে সেখানে লেন্দুপ দর্জির মতো তাঁবেদার সরকার বসিয়ে দেশটিকে ভারতের সাথে একীভূত করে নিতে। সিকিম তার বড় প্রমাণ। ভারতের প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের মানুষকে এ অন্তর্নিহিত সত্যটি উপলব্ধিতে রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। নইলে বিপর্যয় অবধারিত।
 
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’ 
সিকিমের ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রতিরক্ষা ভারত দিনের পর দিন জোরদার করায় এই আশঙ্কা আরো জোরালো হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশের সাথে যুক্ত সীমান্ত আউট পোস্টগুলোর (বিওপি) একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৪-৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলোতে বিএসএফের শক্তিও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিএসএফ এই সীমান্তে থারমাল নাইটভিশন ডিভাইস, টেলিস্কোপিক বন্দুকসহ উচ্চমানের হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে। সেই সাথে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাকে কাঁটাতারের বেড়াসহ ফাডলাইটের আওতায় আনার এবং প্রশিক্ষিত কুকুর মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা ফাডলাইটের আওতায় আনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও ভারত মানছে না। বলাবাহুল্য, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও সড়ক তৈরি প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যেই পড়ে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হলেও তা কোনো ফল দেয়নি। ভারতের বর্তমান প্রস্তুতি অনুযায়ী সীমান্ত সড়ক দিয়ে অনায়াসে সামরিক যান চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করতে পারবে।
এ কারণেই বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’ কাজ করছে প্রবলভাবে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অবিশ্বাসের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশও সিকিমের পরিণতি বরণ করে কি না।

এবার রাজাপুরে সংখ্যালঘু পরিবারের বসতবাড়ি দখল





সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সারা দেশ যখন উত্তাল ঠিক তখনই ঝালকাঠির রাজাপুরে এক সংখ্যালঘু পরিবারের বসতভিটাসহ সর্বস্ব দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। দখলে বাধা দেয়ার সময় জমির মালিক মৃত নিমাই চন্দ্র মিস্ত্রীর স্ত্রী অমিয় বালাকে গতকাল বেধড়ক পেটায় জমি দখলকারীরা।
অমিয় বালা বলেন, ‘১০০ বছরেরও আগ থেকে পূর্ব-পুরুষদের বসতভিটায় আমরা বসবাস করে আসছি। দুপুরে কবির ও শিপন নামে দুই ব্যক্তি জমি তাদের উল্লেখ করে বেশ কিছু লোকজন নিয়ে এসে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমি বের হতে না চাইলে আমাকে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে দিতে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়। পরে আমার বাড়ির জমি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখল করে নেয়। ওই জমিতে আমার স্বামীর শ্মশান পর্যন্ত রয়েছে।’
জমি দখলকারী কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ওই জমি লিজ নিয়েছি। তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে একজন সার্ভেয়ার নিয়ে দখল নিতে এসেছি।’
তবে কবির হোসেন তাৎক্ষণিকভাবে তার বক্তব্যের সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন।
অমিয় বালার ছেলে অনিমেষ মিস্ত্রী বলেন, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি সরকার ভুলক্রমে অ্যানিমি প্রপার্টিতে লিপিবদ্ধ করেছে, যা নিয়ে ঝালকাঠি আদালতে সরকারের সাথে আমাদের মামলা চলছে। কিন্তু মামলার কার্যক্রম বহাল থাকা সত্তেও ইউএনও কিভাবে এই জমি লিজ দেন তা আমাদের জানা নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, এই জমিই আমাদের শেষ সম্বল। তা দখল হয়ে গেলে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘ওই জমির মালিক কারা তা আমার জানা নেই। এটি সরকারি জমি বিধায় এক পক্ষকে লিজ দেয়া হয়েছে। এর বেশি আমি বলতে পারব না।’
এ ব্যাপারে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছি। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহাসহ উপজেলার নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তারের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
নাজিরপুরে মন্দিরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানায়, পিরোজপুরের নাজিরপুরে মন্দিরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গত রোববার রাতে উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের পরিতোষ দাশের বাড়ির মন্দিরে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে মন্দিরের ভেতর থাকা জ্বালানিকাঠ ও ঘরের বেড়ার এক অংশ পুড়ে যায়। এ ব্যাপারে ওই বাড়ির মালিক পরিতোষ দাশ জানান, তিনি সকালে উঠে মন্দিরের ওই অবস্থা দেখে স্থানীয়দের জানান। এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এস এম আক্তারুজ্জামান জানান, মন্দিরের ভেতর থাকা জ্বালানি কাঠ পুড়ে গেলেও সম্পূর্ণ ঘরটি না পুড়ে বেড়ার একটি অংশ পুড়ে স্বাভাবিকভাবে আগুন নিভে যাওয়াসহ প্রতীমার গায়ে থাকা শাড়ি বা এর কোনো অংশ পুড়ে না যাওয়া বা কোনো ক্ষতি না হওয়াসহ পুরো বিষয়টা দেখে বেশ রহস্যজনক মনে হলো।
তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের (পুলিশ) দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলছে।

Friday 10 January 2014

প্রথম আলোর উস্কানিমূলক ফটোশপ প্রমাণিত হওয়ায় তোলপাড়

প্রথম আলোর উস্কানিমূলক ফটোশপ প্রমাণিত হওয়ায় তোলপাড়

নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য অনেকেই সিঁদুরবিহীন নারীদের ফটোশপের মাধ্যমে প্রথম আলো পত্রিকার সিঁদুর লাগানোকে দায়ী করছেন। কিন্তু প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ‘পাঠকের প্রতি’ শিরোনামে তা পুরোপুরি অস্বীকার করে। কিন্তু ফটোশপ বিশেষজ্ঞদের মতে দৈনিকটির দাবি সত্য নয়। পরবর্তী প্রথম আলো পত্রিকায় ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ছবিতে ফটোশপের বিষয়টি ধরা পড়ে আনন্দবাজারে প্রকাশিত একই ছবি থেকে। বিষয়টি টের পাওয়ার প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ তাদের অনলাইন সংস্করণ থেকে ছবিটি সরিয়ে ফেললেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দৈনিকটির হুবহু সংস্করণে ছবিটি বহাল দেখা গেছে। তাছাড়া প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবির স্ক্রীণশর্ট রেখে দিয়েছে অনেকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
prothom

Wednesday 8 January 2014

সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে: বিজেপি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন
বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দায় সরব হয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।
দিল্লিতে আজ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও হিন্দুরা সেখানে যেভাবে অত্যাচারিত হচ্ছেন – তাতে তাদের পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।

দিল্লির অশোকা রোডে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজকের সাংবাদিক বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে প্রথমেই যে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়, তা হল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন।এই ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে কূটনৈতিক মাধ্যমে যাতে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা শুরু করা হয়, তার জন্য ভারত সরকারের কাছেও দাবি জানিয়েছে বিজেপি – তবে সরকারের কাছ থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোনও বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া আসেনি।
দেশের প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন সেখানে বলেন, বাংলাদেশে ভোটের পর থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের আক্রমণের নিশানা করা হচ্ছে।
"সেই সঙ্গেই আমরা দাবি করব, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যাতে এই ঘটনাগুলো বিবেচনায় নেয় এবং যথাযথ কূটনৈতিক পন্থায় এর প্রতিকারের চেষ্টা শুরু করে।"
বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর যেভাবে ধারাবাহিক হামলার ঘটনা ঘটছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সার্বিক স্থিতিশীলতা এতে নষ্ট হচ্ছে – আর হিন্দুদের জীবন, সম্পত্তি – সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দু মহিলারা।’
মিস সীতারামন আরও জানান, ‘হামলাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটছে বাংলাদেশের হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই, আমরা যেমন বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, যশোর বা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি।’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-নির্যাতনের খবরের বিভিন্ন ক্লিপিংস ও ছবিও বিলি করা হয়।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গেই একই ব্র্যাকেটে বাংলাদেশকে বসিয়ে বিজেপি নেতারা বলেন – প্রতিবেশী দুটো দেশেই যেভাবে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছেন, সেটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আঞ্চলিক সুস্থিতি ও সম্প্রীতিও ভীষণভাবে ব্যাহত হবে বলে দাবি করেন তারা।
নির্মলা সীতারামন বলেন – এই বিষয়টা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে গেছে তাতে ভারতের বিরোধী দল নীরব থাকতে পারছে না।
তাঁর কথায়, ‘সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলেই আমরা উদ্বিগ্ন। জানি এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় – কিন্তু হামলাগুলো ভয়ঙ্কর, তাই উদ্বেগ ব্যক্ত না-করেও আমরা পারছি না।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দিরে আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে।
মিস সীতারামন আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গেই আমরা দাবি করব, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যাতে এই ঘটনাগুলো বিবেচনায় নেয় এবং যথাযথ কূটনৈতিক পন্থায় এর প্রতিকারের চেষ্টা শুরু করে।’
বিজেপির দিক থেকে প্রবল চাপ আছে ঠিকই – তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্বস্তি বাড়তে পারে, এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারত সরকার এখনও কোনও বিবৃতি দেয়নি।
বাংলাদেশে নির্বাচনের পর সোমবারের জারি করা বিবৃতিতে তারা সার্বিকভাবে হিংসা-র নিন্দা করেছে ঠিকই, কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে এখনও কোনও শব্দ খরচ করেনি।
তবে বিজেপি বলছে – প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের এত বড় বিপদে তারা যেমন সরব হয়েছেন, তেমনি ভারত সরকারেরও এই পরিস্থিতিতে নীরব থাকা সাজে না।

Friday 3 January 2014

#মুসলিম_উম্মাহর_বিভেদ_ও_ঐক্য : পর্ব ১

আসসালামু আলাইকুম...আশা করি আল্লাহ্‌র রহমতে সকলেই ভালো আছেন, বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে অবশ্যই...!

আজ থেকে "মুসলিম উম্মাহর বিভেদ ও ঐক্য" শিরোনামে একটা ধারাবাহিক লেখা ইনশাল্লাহ লেখে যাবার চেষ্টা করবো...বাকীটা আল্লাহ্‌ তায়ালার ইচ্ছা...আপনাদের যেকোনো সংযোজন-বিয়োজনের ও গঠনমূলক পরামর্শ একান্তুই কাম্য...।

#মুসলিম_উম্মাহর_বিভেদ_ও_ঐক্য : পর্ব ১

ভূমিকা : ইসলাম হচ্ছে ঐক্যের এক সুমহান আদর্শ। মানব জীবনের অবশ্যম্ভাবী সকল বিরোধ ও বিভেদের সমাপ্তি ঘটিয়ে নিজেদের মধ্যে একটি সীসাঢালা প্রাচীরের মতোই অটুট ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতেই এই মহান আদর্শের আগমন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়ে এই ঐক্য গড়াকে আরও সুনিশ্চিত করেছেন। সকল যুগের যাবতীয় চিন্তাধারা ও মতাদর্শের চির সমাপ্তি ঘটিয়ে ইসলামী আদর্শকে জয়যুক্ত করেছেন এবং এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই বিশ্ব মানবতার অস্তিত্ব বহাল রয়েছে আজ শতাব্দীর পর শতাব্দী...।

এখন কথা হচ্ছে, আমাদের মাঝে শেষ নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের পরে আর কোন নবী-রাসুলের আগমন হবেনা কখনোই, যতোই বিশ্বজুড়ে নতুন করে আরও বিরোধ আর বিভেদই মাথা তুলে দাঁড়াক না কেন! সুতরাং এখানে এটি স্পষ্ট যে উদ্ভুত যাবতীয় বিরোধ আর বিভেদ গুলো নিস্পত্তি করার জন্য আমাদের নিজেদেরকেই চেষ্টা করতে হবে, এটি অত্যন্ত জরুরীও বটে, কেননা এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাঝেই রয়েছে উম্মতে মোহাম্মদীর ভবিষ্যতে চির স্থায়িত্বের চাবিকাঠি! আর তাই উম্মতে মোহাম্মদীর ইতিহাসে দেখা যায় যে, এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার পিছনে যুগে যুগে বিভিন্ন মহান ব্যক্তি কিংবা সংগঠন বিশেষের অক্লান্ত পরিশ্রমই সর্বদা ভূমিকা রেখেছে। কোরআন আর হাদিসের বিশেষ কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করে ইসলামের অবিকৃত আদর্শ কে সমুন্নত রাখা এদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আর এতে ধীরে ধীরে বাতিলের যতো অপশক্তির দাপট স্তিমিত হয়ে গেছে এবং এই অমোঘ ব্যবস্থার মাধ্যমেই আমাদের মাঝে অবিকৃত ইসলামী আদর্শ বিদ্যমান রয়েছে।

আজ থেকে প্রায় দেড় সহস্র বছর পূর্বে আরবের সেই ধূসর মরুভূমি অঞ্চলের এক বেদুঈন অধ্যুষিত পরিবেশে উম্মতে মোহাম্মদীর ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো, যেখানে প্রথম দিকে সমাজের গুটিকয়েক দূর্বল শ্রেণীর মানুষেরাই ছিলেন এই উম্মতের সদস্য। বিভিন্ন রকমের ঘাত-প্রতিঘাতের দূর্বোধ্য অপ্রতিকূল পরিবেশের অনতিক্রম পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এই মানবতার মহান মুক্তিদূত রাসুল (সাঃ) এর আমলেই লক্ষাধিক আদম সন্তান ইসলামী উম্মাহর আবহনকালের ঐক্য স্রোতের সাথে একাত্ম হয়ে পড়েন। আদর্শের ঐ অকৃত্রিম মূল শক্তি, এই আদর্শের ধারক-বাহকদের সুদৃঢ় ঈমান ও বিশ্বাস এবং তাঁদের পরম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ফলে এই মহান আদর্শ বিশ্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে বেশী দেরী হয়নি, বরং অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিশ্বের বিস্তীর্ন এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী এই উম্মাহর ঐক্য সূত্রে গ্রোথিত হয়ে যান। আর বলা বাহুল্য যে, সেই যাত্রা আজো অব্যাহত রয়েছে!

আজকের বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি জনশক্তির মধ্যে প্রায় ১৯০ কোটিরও বেশী মানব সন্তান এই ইসলামী উম্মাহর সদস্য। আজ থেকে প্রায় ৬৩ বছর পূর্বে অবিভক্ত ভারতের সরকারী আদম শুমারীতে মুসলমানের সংখ্যা ছিলো যেখানে ৬ কোটি, সেখানে আজকে এই উপমহাদেশের তিন তিনটি স্বাধীন দেশে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে রীতিমতো পঞ্চাশ কোটিরও বেশী! সারা বিশ্বের মুসলমান, বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মুসলমানগণ সংখ্যার দিক দিয়ে এই বিশালতার অধিকারী হওয়া সত্বেও অপরিহার্য আদর্শিক ঐক্যের অভাবেই নিতান্তই হীনশক্তিই বলেই হৃদয় মাঝে অনুভূত হয়...!

মনে রাখতে হবে প্রথমেই যে, একমাত্র আদর্শিক ঐক্যই ইসলামের বুনিয়াদ, এই ঐক্যের অভাবেই মুসলিম উম্মাহ আজ এতোটা জরাগ্রস্থ আর বিভক্ত। আর এই ঐক্যের রাজপথ যতোটা সহজ সরল, যতোটা জটিলতা মুক্ত, ততোটাই একে জটিল করেছে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট বিভেদের মহামারী ভাইরাস, বিভেদের চোরাপথে বারবার একে আঘাত করে গেছে যতোসব অনৈক্যের আর বিভেদের ঝড়! যতদিন একে আমরা নিজেরাই ত্যাগ না করে ফিরে আসতে পারবো হকের পথে, ততদিন আমাদের কে বারবার ঐ অনৈসলামিক শক্তিরা পরাজিত করেই যাবে...!

তাহলে এ থেকে পরিত্রান কি নেই কোনমতেই...! না...আছে, আর তা আছে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এবং যুগে যুগে যে কিতাব আমাদেরকে চির সত্যের পথে আহ্বান করে এসেছে সেই মহা গ্রন্থ আল-কোরআনেই...!

সূরা আনফালের ৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা স্পষ্টই বলেছেন যে, "আনুগত্য করো আল্লাহ্‌র ও তার রাসুলের (সাঃ)।
কলহে লিপ্ত হয়োনা, তা হলে তোমরা ব্যর্থ হয়ে যাবে, তোমাদের শক্তি-সামর্থ চলে যাবে এবং তোমরা এই পথে ধৈর্য ধারন করবে। আল্লাহ্‌ সবরকারীদের সাথেই আছেন।"

সুতরাং এখন আমাদেরকেই বুঝতে হবে আমাদের কি করনীয়...! সময় এখন পুরনো যাবতীয় বিভেদ ভুলে গিয়ে পরাজিত ঐ বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্য গড়ে তুলে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বার...!

মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকেই তার দ্বীনের পথেই কবুল করুন...!

#জুনাইদ

Thursday 26 December 2013

আরও ‘কঠোর’ হওয়ার হুমকি প্রধানমন্ত্রীর


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনে সরকার আরো কঠোর হবে। একাত্তর টেলিভিশনকে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, বিরোধীদল না এলেও নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলার সুযোগ নেই।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পাল্টা হুমকি; প্রতিরোধ সংগ্রামীরা প্রস্তুত


আবু যুহরি
আবু যুহরি
২৬ ডিসেম্বর (রেডিও তেহরান): গাজায় হামলার পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠন। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্টের প্রভাবশালী নেতা খালেদ আল-বাতশ বলেছেন, ইসরাইল হামলা চালালে পরিণতি ভালো হবে না। প্রতিরোধ যোদ্ধারা যে কোন হামলা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত।

তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হলে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিবে আঘাত হানবে। এ অবস্থায় ইসরাইলের পরিস্থিতি কী ধরনের হবে, তা তাদের একবার চিন্তা করা উচিত। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু যুহরি বলেছেন, দখলদার ইসরাইল গাজায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যরা যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে। ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো গাজার সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লংঘনের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে।

গত মঙ্গলবার গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি জঙ্গি বিমানের হামলায় চার বছর বয়সী শিশুসহ দুই ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। গাজায় ২০১২ সালে ৮ দিনের ইসরাইলি হামলার পর মিশরের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তেল আবিবের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। কিন্তু সেই চুক্তি মেনে চলছে না ইসরাইল।#

সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মার্কিন ড্রোন হামলা; এবার নিহত ৪



সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মার্কিন ড্রোন হামলা; এবার নিহত ৪
 সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে আবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী মার্কিন ড্রোন হামলা হয়েছে।

পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের প্রধান শহর মিরানশাহের কাছে একটি বাড়িতে মার্কিন ড্রোন থেকে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। এতে নিহত হয়েছে চারজন। নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী বলে কয়েকটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে।

আফগান সীমান্তবর্তী মিরানশাহ শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কুতাব খেল গ্রামে গত মধ্যরাতে এ হামলা চালানো হয়। পেশোয়ারের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। মিরানশাহের এক কর্মকর্তা জানান, হামলায় আহত এক ব্যক্তির অবস্থার গুরুতর। ড্রোন হামলায় নিহতদের পরিচয় তাতক্ষণিকভাবে জানা যায়নি তবে ধারণা করা হচ্ছে- তারা সবাই আফগান বংশোদ্ভূত।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে মারাত্মক টানাপড়েন রয়েছে। পাক সরকার বার বার প্রতিবাদ ও নিন্দা করলেও মার্কিন সন্ত্রাসী ড্রোন হামলা বন্ধ করা হয়নি। ড্রোন হামলা বন্ধের দাবিতে পাকিস্তানের তেহরিকে ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত আফগানিস্তানে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের জন্য রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ রাখা হবে।#

পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আবার পালিয়েছে ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসী পরশ


পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আবার পালিয়েছে ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসী পরশ
২৬ ডিসেম্বর (রেডিও তেহরান): ভারতের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী বিক্রম পরশ নিরাপত্তারক্ষীদের চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে পালিয়ে গেছে। হত্যা, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধসহ অন্তত ১০০টি মামলার আসামী পরশ বুধবার ভোরে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন থেকে পালিয়ে যায়।

পালিয়ে যাওয়ার সময় দিল্লি আর্মড পুলিশের চার সদস্য সাব-মেশিনগান হাতে নিয়ে তাকে পাহারা দিচ্ছিল। নিহত গডফাদার নিতু দাবোডিয়ার ডানহাত হিসেবে পরিচিত বিক্রম পরশকে বাথিনদা’র একটি আদালতে হাজির করার পর ট্রেনে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের চেতনানাশক খাইয়ে সে পালিয়ে যায়। চার নিরাপত্তারক্ষীর দুইজনকে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের ওপর এবং আরেকজনকে দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং এলাকায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। চতুর্থ বন্দুকধারী পুলিশকে স্টেশনের পাশের রাস্তা ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটতে দেখা যায়। তাদের চারজনকেই সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে।

২৭ বছর বয়সী পরশ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আটকাবস্থা থেকে পালিয়ে গেল। ২০১২ সালে সে তার প্রহরায় নিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীদের দামী পোশাক কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া, গত বছরই দাবোডিয়া ও আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী দাওয়ারকাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল সে। পরশ পালিয়ে যাওয়ায় আন্ডারগ্রাউন্ড অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এ কারণে তাকে ধরতে ১২টি তল্লাশি টিমকে মাঠে নামিয়েছে পুলিশ।#

বিমান ছিনতাইয়ের সব ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ করেছে ইরান


বিমান ছিনতাইয়ের সব ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ করেছে ইরান
 ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)’র প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জাফারি বলেছেন, ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে শত্রুরা অন্তত ১৩০ বার ইরানি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু গার্ড বাহিনীর সদস্যরা তা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। শত্রুদের একটি চেষ্টাও সফল হয়নি।

বিমান ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দখলদার ইসরাইল এবং সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলামী বিপ্লব বিরোধী শক্তি জড়িত বলে তিনি জানান। আইআরজিসি'র কাছে বিমানের নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পনের নির্দেশ জারির ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন।

মেজর জেনারেল জাফারি বলেছেন, ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের শেষের দিকে বিমান ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্র বেড়ে যায়, কিন্তু তাতে তারা সফল হতে পারেনি। শত্রুরা বিমান ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্র সফল করার মাধ্যমে ইসলামী ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে চেয়েছিল।

তিনি আরো জানিয়েছেন, ইসলামী বিপ্লবের পর বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেয়ে আইআরজিসি’র অর্ধ শতাধিক সদস্য শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে।#

৫ বছরের মধ্যে মহাশূন্যে টেলিযোগাযোগ উপগ্রহ পাঠাবে ইরান

৫ বছরের মধ্যে মহাশূন্যে টেলিযোগাযোগ উপগ্রহ পাঠাবে ইরান
 আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে মহাশূন্যে টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র- আইএসআরসি’র প্রধান হাসান কারিমি আজ (বৃহস্পতিবার) এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইরান দেশে তৈরি টেলিযোগাযোগ উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

ইরান এ পর্যন্ত মহাকাশে ছয়টি উপগ্রহ পাঠিয়েছে। তবে সেগুলোর কোনটিই টেলিযোগাযোগ উপগ্রহ নয়। আগের স্যাটেলাইটগুলো মহাশূন্যে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উতক্ষেপন করা হয়েছে।

২০০৯ সালে ইরান প্রথম নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি 'উমিদ' বা 'আশা' উপগ্রহ মহাকাশে পাঠায়। ওই উপগ্রহটি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৫ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং ভূ-পৃষ্ঠে স্থাপিত কেন্দ্রে তথ্য-উপাত্ত পাঠায়। এরপর ইরান ২০১১ সালের মার্চে মহাকাশে জীবন্ত প্রাণী পাঠাতে সক্ষম হয়।#

আর্জেন্টিনায় পিরানহার ভয়াবহ আক্রমণ; আহত ৬০


আর্জেন্টিনায় পিরানহার ভয়াবহ আক্রমণ; আহত ৬০
 পিরানহা মাছের ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনায়। আর সেই আক্রমণে আহত হয়েছে ৬০ জন।

আর্জেন্টিনার রিও পারানা নদীতে ভয়ংকর পিরানহার এ আক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে সাত বছরের একটি শিশু রয়েছে। শিশুটি তার আঙুলের একটি অংশ হারিয়েছে। রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরবর্তী রোজারিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আর্জেন্টিনার লা ক্যাপিটাল পত্রিকার বরাত দিয়ে ভয়েস অব রাশিয়া এ খবর দিয়েছে।

পিরানহার আক্রমণে অনেকেরই হাত বা পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার ভয়ংকর এ পিরানহা কামড় দিয়েছে অনেকের পিঠে।

স্থানীয় হাসপাতালের এক ডাক্তার জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালের মধ্যে এটা হচ্ছে পিরানহার প্রথম হামলা।#

দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন কর্ণেল অলি



একটি দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব:) অলি আহমেদ। সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলাটি দায়ের করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ জজ বিচারক মোজাম্মেল হক তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচির ব্যাপারে ইসি পদক্ষেপ নেবে না : সিইসি


বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচির ব্যাপারে ইসি পদক্ষেপ নেবে না : সিইসি
 বিএনপি-জামায়াতের ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচির ব্যাপারে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সিইসি বলেন, ১৮ দলের কর্মসূচি কোনো নির্বাচনী কর্মসূচি নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে ইসির কোনো করণীয় নেই।
- See more at: 

নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই বিএনপির : শেখ হাসিনা


নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই বিএনপির : শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় দেশবাসিকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, কেউ নির্বাচন বাঞ্চাল করতে পারবে না। বিএনপির ক্ষমতা নেই এ নির্বাচন প্রতিহত করার। ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা কথায় কথায় আল্টিমেটাম দেন। ওনার এক আল্টিমেটাম আসে আবার সেখান থেকে আরেক আল্টিমেটামে যান। ওনার আল্টিমেটামেরও শেষ নেই আর হুমকী-ধামকীরও শেষ নেই। আমি চেয়েছিলাম পার্লামেন্টে আমরা যারা আছি আলাপ আলোচনা করে নির্বাচন অবাধ নিরেপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবো।
প্রধানমন্ত্রী জামায়াতকে জঙ্গিদল হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তারা একাত্তরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে, আগুন দিয়েছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। এখন আবার তারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে। তাদের আর এদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে।

২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল ডেকেছে সরকার সমর্থক সংগঠন

২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল ডেকেছে সরকার সমর্থক সংগঠন

 ১৮ দলের ঢাকামুখি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে অভিযাত্রা ঠেকাতে আগামী ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল ডেকেছে মটরচালক শ্রমিক লীগ নামে সরকার সমর্থিত একটি সংগঠন।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বার্তায় মটরচালক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি আবু তাহের উদ্দিন এ হরতাল আহ্বানের কথা জানান। 


প্রেস বার্তায় বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল চক্রান্তের প্রতিবাদে এবং আন্দোলনের নামে পরিবহন চালক শ্রমিকদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করছে বিএনপি-জামায়াত। আবার সেই পরিবহনযোগে ঢাকায় কথিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসির নাম দিয়ে জামায়াত-বিএনপির অরাজকতা সৃষ্টির কর্মসূচি রুখে দিতে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হবে।এ হরতাল বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। তবে এম্বুলেন্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি, দোকান-পাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। 

গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পরিকল্পিত নাশকতা চলছে? # লগি-বৈঠার তা-বের মাধ্যমে রাজনীতিতে সহিংসতা প্রথম আমদানি করেছে আ’লীগ


শহীদুল ইসলাম : শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি সুযোগসন্ধানী মহল পরিকল্পিত নাশকতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে এর দায়ভার দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ১৮ দলীয় আন্দোলনের উপর চাপাচ্ছে। গাড়িতে আগুন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নানাবিধ নাশকতামূলক কার্যক্রমের সাথে কারা জড়িত তার অনুসন্ধান না করেই বিরোধী দলের উপর দায় চাপানো হচ্ছে এই মানসিকতা থেকেই। সরকার সবচেয়ে বেশি সোচ্চার জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে। অথচ এমন একটি প্রমাণও নেই যে, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত সন্দেহে যারা হাতেনাতে ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কেউ আছে। এতো দীর্ঘ আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের যে হাজারো মিছিল-সমাবেশ হয়েছে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র দূরে থাক দেশীয় বড় রামদা-কিরিচের মতো অস্ত্রও দেখা যায়নি। তারপরও একটি দলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে চলছে একতরফা অপপ্রচার। অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল ও সন্ত্রাসী অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য।
রাজপথের বিক্ষোভমূলক আন্দোলন-সংগ্রামের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল হলো আওয়ামী লীগ। সব আন্দোলন সংগ্রামেই মিছিল, মিটিং, জমায়েত, মাইকিং, পিকেটিং হয়ে আসছে। এটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় ও মাধ্যম। বাংলাদেশ হওয়ার পরও জ্বালাও-পোড়াও ধরনের যেসব আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার প্রায় সব ক’টির অগ্রভাগে ছিল আওয়ামী লীগ। আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন তাও এনেছে এই দলটি। প্রথম দিকের আন্দোলনে রিকশার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হতো, পরে এসেছে রিকশা ভাংচুর, তারপর আসে গাড়ি ভাংচুর, আগুন। আর পুলিশের উপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ইত্যাদি সব সময়কার কর্মসূচিতেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আান্দোলন-সংগ্রামে সহিংসতা এসেছে ১৯৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন থেকে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে ৬ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং লাশের উপর উন্মত্ত নর্তন-কুর্দনের মাধ্যমে রাজনীতিতে চূড়ান্ত সহিংসতার জন্ম দেয় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগ বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতের মিটিং-মিছিল-সমাবেশ যা গণতান্ত্রিক অধিকার বানচালে একের পর এক পরিকল্পিত নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ নিলেও তা মেনে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আটকের পরও ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্তু জামায়াতের প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার যখন জামায়াতকে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের কর্মসূচি পালনে বাধা দিতেই থাকে, তখন কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের বাধা ও হামলার মুখে আত্মরক্ষামূলক কিছু ঘটনা ঘটেছে যা তাৎক্ষণিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত, পরিকল্পিত নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বেশকিছু নিষ্ঠুর ধরনের ঘটনা ঘটেছে যা কারো পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে বা অন্যভাবে গাড়িসমেত মানুষ পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে, যা আন্দোলনের স্বার্থ ও কর্মসূচির সাথে সঙ্গতিহীন। প্রশ্ন এসেছে যে, এসব ঘটনার সাথে জড়িত কারা? পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা এই কাজের সাথে কোনভাবেই জড়িত হতে পারে না। বরং যারা এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায় যারা আন্দোলনের বদনাম করতে চায়, মানুষকে ক্ষেপাতে চায় এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তারাই এই কাজের সাথে জড়িত। সর্বাধিক আলোচিত শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে হত্যার ঘটনা রহস্যঘেরা হলেও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পঙ্কজ দেবনাথের মালিকানাধীন এই বিহঙ্গ পরিবহনে একাধিক ঘটনা ঘটার পরও তার তদন্ত হয়নি, বিচার হয়নি। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এর সাথে কারা জড়িত। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, খুলনায় রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলাসহ অনেকগুলো ঘটনার সাথে জড়িত আওয়ামী ঘরানার লোকেরা হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরায় হিন্দু বাড়িতে হামলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে যুবলীগ নেতা। এভাবে সারা দেশেই নিজেরা নাশকতা চালিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। তারা নিজেরা এসব ঘটিয়ে জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের উপর দোষ চাপাতে চায়। আলোচিত এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, সুপরিকল্পিত। মিছিল, মিটিং বা পিকেটিং-এর সময় বিচ্ছিন্নভাবে ২/৪টি গাড়ি ভাংচুর হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের আলোচিত ঘটনাগুলো সেই ধরনের নয়। ঘটনার ধরন, সরকারি মনোভাব, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ আর তাদের অনুগত মিডিয়ার প্রচারণা একই ধরনের বা একসূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনার পর তদন্ত ছাড়াই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে তড়িঘড়ি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার ও মামলা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি শেষের প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা পর বাংলা মোটরে গাড়ি পোড়ানো এবং তাতে পুলিশ মারার যে ঘটনা ঘটেছে এবং তারপর যতো দ্রুত বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাও আগের ঐ ঘটনাগুলোর মতোই। এতেও বোঝা যায় যে, বিরোধী দলের নেতাদেরকে মামলায় জড়িত করার অসৎ উদ্দেশ্যে এসব নাশকতা চালানো হতে পারে।

-বর্তমান সরকার শিক্ষা সংস্কৃতিসহ সকল পর্যায়ে ইসলামের ওপর নগ্ন আঘাত হেনেছে -ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে ঈমানী চেতনা মুছে দিতে চাচ্ছে নাস্তিক্যবাদের পক্ষ ত্যাগ করে অবিলম্বে গণমানুষ ও তৌহিদী জনতার ওপর জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করুন -হেফাজতে ইসলাম


গতকাল বুধবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারীতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী
: গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দান এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে মহাসম্মেলন করতে না দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। গতকাল (বুধবার) বেলা ২টায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজত আমীর দেশের শীর্ষ আলেম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আাব্দুল করিম, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা শফিকুদ্দীন, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাসান মুরাদাবাদী প্রমুখ।
বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল ও সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ওলামায়ে কেরামের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে বিগত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দান এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ধর্মীয় মহাসমাবেশ করতে না দেয়ায় সরকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাকস্বাধীনতাসহ জনগণের মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে। জোর-জুলুম ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার চেষ্টাসহ নাগরিকদেরকে এসবের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। দেশের সর্বত্রই আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। একদিকে সরকার ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ওলামা-মাশায়েখদেরকে ওয়াজ-মাহফিল, তাফসীর মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে দিচ্ছে না। একটি বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকগণ পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইসলামের বাণী প্রচার করতে সরকারিভাবে বাধাগ্রস্ত হবেন, এটা কল্পনাও করা যায় না।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আজ ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী কথিত গণজাগরণ মঞ্চের রাস্তা দখল ও সমাবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন হয় না, অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তৌহিদী জনতাকে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে অনুমতি দেওয়া হয় না। মূলত ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে বর্তমান সরকার এই দেশ থেকে ইসলাম ও ঈমানী চেতনাকে মুছে দিতে চাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকার নাস্তিক্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষীদের প্ররোচনায় সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতিকে বাদ দিয়ে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা নাস্তিকতা চালু করছে। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সকল পর্যায়ে ইসলামের ওপর নগ্ন আঘাত হেনেছে। দাড়ি, টুপি, নামাযী ও হিজাবধারী মা-বোনদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কারণে দেশের সকল স্তরে নাস্তিক্যবাদীরা ইসলামবিরোধী নীতি ও প্রথা চালু করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ সরকার হিন্দু, বৌদ্ধসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে আসলেও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা দূরে থাকুক, বরং নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইসলামবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। এদেশের কোটি কোটি মুসলমান এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না।
বৈঠকে শীর্ষ ইসলামী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ইসলাম ধর্মীয় কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে এই সরকার এটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণের পক্ষে নয়, বরং তারা এদেশের মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদাকে ধ্বংস করে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে বাধা দিচ্ছে, তাতে এই সরকার যে ইসলামবিরোধী, ঈমান-আক্বিদা বিরোধী, আল্লাহ-রাসূলবিরোধী; এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের অন্যান্য ইসলামবিরোধী পদক্ষেপের পাশাপাশি ওয়াজ-মাহফিল, তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন বন্ধ ও নিষিদ্ধ করার বর্তমান ভূমিকায় আমরা জোর আশঙ্কা করছি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যতে দেশের মসজিদে আযান দেয়া নিষিদ্ধ করবে, মক্তব মাদরাসা বন্ধ করে দেবে এবং দাড়ি-টুপি ও হিজাব পরে কাউকে রাস্তায় বের হতে দেবে না।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সরকার ঈমান-আক্বিদাবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপের সাথে যেমন প্রকাশ্য জড়িয়ে পড়েছে, তেমনি গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ সরকারের হাতে মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা নিয়ে বেঁচে থাকা যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি জনগণের জানমালও নিরাপদ নয়। জনসমর্থনহীন সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিবাদী ও নিরীহ জনতাকে গুলী করে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। হামলা, মামলা ও গুমের পথ বেছে নিয়েছে তারা। সরকার প্রতিবাদী জনতা ও নেতৃবৃন্দকে হামলা-মামলা খুন-গুম ও বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে হিং¯্র উপায়ে নাগরিক অধিকার হরণ করার মতো বর্বরতা শুরু করছে। সরকারের একগুঁয়েমি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতায় চাল-ডাল, নিত্য ব্যবহার্য খাদ্য ও আসবাবপত্রসহ দ্রব্য মূল্য এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ সরকারের রাতদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার আয়োজন ছাড়া গণমানুষের এই শোচনীয় অবস্থার নিরসনে সামান্যতম চিন্তাও নেই। ওপরন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অন্যায় নির্দেশ দিয়ে হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুলীবর্ষণ, গুমসহ এক ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে গণমানুষকে জুলুমের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। এমন জোর-জুলুম ও নৈরাজ্যকর অবস্থা একটা সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। আল্লাহ-রাসূল ও ইসলামের ওপর কেউ আঘাত হানলে যেমন প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব, তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করতে চাইলে সেখানেও প্রতিবাদ করতে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, নাস্তিক্যবাদের পক্ষ ত্যাগ করে অবিলম্বে গণমানুষ ও তৌহিদী জনতার ওপর জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করুন। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণসহ হামলা, মামলা ও মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ স্বাভাবিক করে অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন। দেশ ও জনগণের জন্য ওলামায়ে কেরামেরও দায়-দায়িত্ব রয়েছে, তারা চুপ করে বসে থাকবে না। দ্রুত বিদ্যমান পরিস্থিতির সমাধান না হলে ওলামায়ে কেরাম দেশব্যাপী সম্মিলিতভাবে তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে ‘দেশ ও ঈমান রক্ষার মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারকে অত্যাচার ও ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করবে।
 বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার আমাদের সাথে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে। এটি আমাদের কোন রাজনৈতিক বা নির্বাচনী সমাবেশ ছিল না। এটা দ্বীনি সমাবেশ। এই সমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। আমরা এই মহাসমাবেশ করতে বাধা প্রদান করায় সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের অশান্ত, সহিংস পরিবেশ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য ও শান্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে আনাসহ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার করার জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার সারা দেশে দোয়া দিবস পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হবে। এছাড়া আগামীতে সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় শানে রেসালাত সম্মেলন করা হবে। বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিচালনায় শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম জাতির বর্তমান ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি, নাগরিকদের জানমালের সুরক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

পুলিশের বাসে আগুন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ তিন ডজন নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

 রাজধানীর বাংলামোটরে বাসে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ট্রাফিক পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ তিন ডজন নেতার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রমনা থানার এসআই নাজমুল ইসলামের দায়ের করা এ মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ১৮ থেকে ২০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে মামলার এজাহারে ‘উস্কানিদাতা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রওশন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি মামুন হাসান ও ছাত্রদল নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মিন্টুর নামও রয়েছে এজাহারে।
মামলাটির এজাহারেও বলা হয়েছে,  মির্জা ফখরুলসহ আসামীদের উস্কানিতে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ওই নাশকতা ঘটায়।
১৮ দলের পঞ্চম দফা অবরোধ কর্মসূচি বিকেল ৫টায় শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার আগেই মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী ২৯ ডিসেম্বর দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, আগুনে পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ফেরদৌস খলিল (৩৫) নিহত হন। ওই বাসের চালক মোঃ বায়েজিদ (২৫) ও কনস্টেবল ফায়জুল ইসলামও (৪১) দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সালাহউদ্দিন সোহাগ নামে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন, বাসটিতে আগুন জ্বলার সময় মোটরসাইকেলে করে দু’জনকে সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে দেখেন তিনি।
রমনা থানার এসআই নাজমুল ইসলামের দায়ের করা মামলার (নং-৪২) এজাহারেও বলা হয়েছে,  মির্জা ফখরুলসহ আসামীদের উস্কানিতে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ওই নাশকতা ঘটায়। এর আগে নবেম্বরের শেষে শাহবাগ ও মালিবাগে বাসে আগুন দেয়ার দুটি ঘটনাতেও ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের আসামী করা হয়।
গত ২৬ নবেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে তা বাতিলের দাবিতে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছিল ১৮ দল। টানা অবরোধের সময় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
শোক  ........
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল কর্তব্য পালন শেষে বাসযোগে ব্যারাকে ফেরার পথে বাংলামোটর মোড়ে দুর্বৃত্তের নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাত সাড়ে এগারটায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৪২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল ১৯৭১ সালে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার নাগের ভিটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কনস্টেবল পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। মাত্র এক মাস পূর্বে  তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন।
গতকাল বুধবার বাদ জোহর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাযের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল হাসান মাহমুদ খন্দকার, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যবৃন্দ এবং স্বজনরা জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
জানাযা শেষে পুলিশের পক্ষে ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন ডিএমপি কমিশনার পরে পুলিশ এস্কটসহ লাশ তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখা সূত্রে জানানো হয়।

-বর্তমান সরকার শিক্ষা সংস্কৃতিসহ সকল পর্যায়ে ইসলামের ওপর নগ্ন আঘাত হেনেছে -ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে ঈমানী চেতনা মুছে দিতে চাচ্ছে নাস্তিক্যবাদের পক্ষ ত্যাগ করে অবিলম্বে গণমানুষ ও তৌহিদী জনতার ওপর জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করুন -হেফাজতে ইসলাম


গতকাল বুধবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারীতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী
 গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দান এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে মহাসম্মেলন করতে না দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। গতকাল (বুধবার) বেলা ২টায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজত আমীর দেশের শীর্ষ আলেম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আাব্দুল করিম, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা শফিকুদ্দীন, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাসান মুরাদাবাদী প্রমুখ।
বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল ও সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ওলামায়ে কেরামের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে বিগত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দান এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ধর্মীয় মহাসমাবেশ করতে না দেয়ায় সরকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাকস্বাধীনতাসহ জনগণের মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে। জোর-জুলুম ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার চেষ্টাসহ নাগরিকদেরকে এসবের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। দেশের সর্বত্রই আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। একদিকে সরকার ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ওলামা-মাশায়েখদেরকে ওয়াজ-মাহফিল, তাফসীর মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে দিচ্ছে না। একটি বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকগণ পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইসলামের বাণী প্রচার করতে সরকারিভাবে বাধাগ্রস্ত হবেন, এটা কল্পনাও করা যায় না।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আজ ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী কথিত গণজাগরণ মঞ্চের রাস্তা দখল ও সমাবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন হয় না, অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তৌহিদী জনতাকে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে অনুমতি দেওয়া হয় না। মূলত ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে বর্তমান সরকার এই দেশ থেকে ইসলাম ও ঈমানী চেতনাকে মুছে দিতে চাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকার নাস্তিক্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষীদের প্ররোচনায় সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতিকে বাদ দিয়ে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা নাস্তিকতা চালু করছে। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সকল পর্যায়ে ইসলামের ওপর নগ্ন আঘাত হেনেছে। দাড়ি, টুপি, নামাযী ও হিজাবধারী মা-বোনদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কারণে দেশের সকল স্তরে নাস্তিক্যবাদীরা ইসলামবিরোধী নীতি ও প্রথা চালু করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ সরকার হিন্দু, বৌদ্ধসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে আসলেও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা দূরে থাকুক, বরং নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইসলামবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। এদেশের কোটি কোটি মুসলমান এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না।
বৈঠকে শীর্ষ ইসলামী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ইসলাম ধর্মীয় কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে এই সরকার এটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণের পক্ষে নয়, বরং তারা এদেশের মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদাকে ধ্বংস করে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে বাধা দিচ্ছে, তাতে এই সরকার যে ইসলামবিরোধী, ঈমান-আক্বিদা বিরোধী, আল্লাহ-রাসূলবিরোধী; এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের অন্যান্য ইসলামবিরোধী পদক্ষেপের পাশাপাশি ওয়াজ-মাহফিল, তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন বন্ধ ও নিষিদ্ধ করার বর্তমান ভূমিকায় আমরা জোর আশঙ্কা করছি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যতে দেশের মসজিদে আযান দেয়া নিষিদ্ধ করবে, মক্তব মাদরাসা বন্ধ করে দেবে এবং দাড়ি-টুপি ও হিজাব পরে কাউকে রাস্তায় বের হতে দেবে না।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সরকার ঈমান-আক্বিদাবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপের সাথে যেমন প্রকাশ্য জড়িয়ে পড়েছে, তেমনি গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ সরকারের হাতে মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা নিয়ে বেঁচে থাকা যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি জনগণের জানমালও নিরাপদ নয়। জনসমর্থনহীন সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিবাদী ও নিরীহ জনতাকে গুলী করে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। হামলা, মামলা ও গুমের পথ বেছে নিয়েছে তারা। সরকার প্রতিবাদী জনতা ও নেতৃবৃন্দকে হামলা-মামলা খুন-গুম ও বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে হিং¯্র উপায়ে নাগরিক অধিকার হরণ করার মতো বর্বরতা শুরু করছে। সরকারের একগুঁয়েমি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতায় চাল-ডাল, নিত্য ব্যবহার্য খাদ্য ও আসবাবপত্রসহ দ্রব্য মূল্য এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ সরকারের রাতদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার আয়োজন ছাড়া গণমানুষের এই শোচনীয় অবস্থার নিরসনে সামান্যতম চিন্তাও নেই। ওপরন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অন্যায় নির্দেশ দিয়ে হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুলীবর্ষণ, গুমসহ এক ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে গণমানুষকে জুলুমের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। এমন জোর-জুলুম ও নৈরাজ্যকর অবস্থা একটা সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। আল্লাহ-রাসূল ও ইসলামের ওপর কেউ আঘাত হানলে যেমন প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব, তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করতে চাইলে সেখানেও প্রতিবাদ করতে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।
বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, নাস্তিক্যবাদের পক্ষ ত্যাগ করে অবিলম্বে গণমানুষ ও তৌহিদী জনতার ওপর জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করুন। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণসহ হামলা, মামলা ও মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ স্বাভাবিক করে অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন। দেশ ও জনগণের জন্য ওলামায়ে কেরামেরও দায়-দায়িত্ব রয়েছে, তারা চুপ করে বসে থাকবে না। দ্রুত বিদ্যমান পরিস্থিতির সমাধান না হলে ওলামায়ে কেরাম দেশব্যাপী সম্মিলিতভাবে তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে ‘দেশ ও ঈমান রক্ষার মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারকে অত্যাচার ও ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করবে।
 বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার আমাদের সাথে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে। এটি আমাদের কোন রাজনৈতিক বা নির্বাচনী সমাবেশ ছিল না। এটা দ্বীনি সমাবেশ। এই সমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। আমরা এই মহাসমাবেশ করতে বাধা প্রদান করায় সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের অশান্ত, সহিংস পরিবেশ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য ও শান্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে আনাসহ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার করার জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার সারা দেশে দোয়া দিবস পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হবে। এছাড়া আগামীতে সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় শানে রেসালাত সম্মেলন করা হবে। বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিচালনায় শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম জাতির বর্তমান ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি, নাগরিকদের জানমালের সুরক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

Sunday 22 December 2013

অবরোধে বিনিয়োগশূন্য হয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত


bank bd
৭১বাংলা:
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে বিনিয়োগের চাকা অচল হয়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। উপরন্তু ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছিল তা ফেরত আসছে না। ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থবিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারা ধরনা দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতের খেলাপিদের ছাড় দিয়েছে। কমিয়ে দেয়া হয়েছে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের সুদহার। সব মিলে ব্যাংকের সামগ্রিক আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয় কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। এক দিকে আয় কমছে, বাড়ছে খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি। অপর দিকে চলছে বিনিয়োগশূন্যতা।
সব মিলে সামনে দেশের ব্যাংকিং খাত মহাসঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর করণীয় বিষয় নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ দেশের সব বেসরকারি ও রাষ্ট্র খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাথে এ বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। বাকি ১৯ টাকা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বিধিবদ্ধ তহবিল হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে বিনিয়োগচাহিদা বেশি থাকলে ব্যাংকগুলো রিজার্ভ তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ স্থবিরতার কারণে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, বর্তমান ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে ৭১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারছে। তবে এর বেশির ভাগই চলতি বিনিয়োগ। নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। এ কারণে প্রতি ১০০ টাকা আমানতের ১০ টাকা বিনিয়োগ করতে না পারায় অলস পড়ে আছে। অথচ এ ১০ টাকা আমানতের ওপর নির্ধারিত হারে ব্যাংকগুলোকে সুদ গুনতে হচ্ছে।
অপর দিকে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তারা ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে নাম লেখাচ্ছেন। আর এভাবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে বাড়ছে মন্দ ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসেবে ১০০ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭০ টাকাই মন্দ ঋণ, যা আদায় অযোগ্য বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, চলতি ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকিং খাতে আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা ছিল ৩২ হাজার ২৭ কোটি টাকা কিন্তু এ সময়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এ ঘাটতি তিন মাস আগে অর্থাৎ গত জুন শেষে ছিল দুই হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৮১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে বলে তারা আভাস পেয়েছেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে বিনিয়োগ স্থবিরতায় তাদের আমদানি রফতানি থেকে এলসি কমিশন আয় কমে গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করায় ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর আরো নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্যয় কমছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়ছে। বাড়ছে ইউটিলিটি বিল ও ভবন ভাড়া। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকগুলোর লোকসান বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে মূলধন ঘাটতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সংরক্ষণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে ১৪ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ডিসেম্বর শেষে এ ঘাটতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমনি পরিস্থিতিতে, ব্যাংকগুলোর সামনের সম্ভাব্য বিপর্যয় কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
৭১বাংলা/ইএম