বাসস : প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অন্তরবর্তীকালীন সময়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তরবর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে।’
গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সকল কেন্দ্র থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করে বলেন, ‘তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি উল্লেখ করে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন এবং নির্যাতিত মা-বোন সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, ২০০৭-এর ১/১১-এর মতো কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের ওপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এ ধরনের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবেনা- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে বাংলার মানুষ ভোট দিয়ে যে আস্থা এবং বিশ্বাস আমাদের উপর রেখেছেন আমরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের সেই আস্থা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আপনাদের ভোটে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কৃষি, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা সারা বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত মানুষ দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে মধ্যবিত্তের কাতারে উঠে আসছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষ ও গার্মেন্ট শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন দিনমজুর সারাদিনের পরিশ্রম শেষে দু’ কেজি চাল কেনার মতো মজুরি পেতো না। আজ তার মজুরির টাকায় সে ৮ থেকে ১০ কেজি চাল কিনতে পারছে। সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রও কিনতে পারছে। এই কৃতিত্বের দাবীদার আপনারাই। আমি বিশ্বাস করি, যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আনতে পারে সেই জাতির উন্নয়ন কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে, তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষিত আগামী প্রজন্ম গড়তে আমরা কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রতি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগসহ তথ্য সেবাকেন্দ্র খুলে দিয়েছি। তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তারা গ্রামে থেকেই নগদ টাকা আয় করে জীবনে সচ্ছলতা আনতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো সহজ হয়েছে। স্কাইপের মাধ্যমে, ভিডিও কলের মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার মানুষ তাদের প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। প্রাথমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ কোটি ১৯ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি দেয়া শুরু হয়েছে। ঘরের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডাক্তার ও নার্সদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন। ফলে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হারও কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা অর্থাৎ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিসসহ সকল প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের পেশাগত সমস্যার সমাধান করেছি। বেতন ভাতা বাড়িয়েছি। চাকুরির বয়স সীমা বাড়িয়েছি। তাদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য বিশ্বমানের আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আরো সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছি।
সকল প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেছি, পদের নাম পরিবর্তন করে মর্যাদাপূর্ণ নামকরণ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পানির সমস্যা ও যানজট সমস্যার সমাধানে আমাদের সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বেশকিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে যার সুবিধা নাগরিকরা অচিরেই পাবেন। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুরে চারটি নতুন সিটি কর্পোরেশন করেছি।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ করে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছি যা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। অনেক কাজ অব্যাহত আছে। রেল, সড়ক ও নৌপথের সংস্কার করা হয়েছে। নতুন রেল ইঞ্জিন, বগি ও লোকোমেটিভ ক্রয় করা হয়েছে। বিআরটিসির জন্য এক হাজার নতুন বাস ক্রয় করা হয়েছে। এবারের ঈদে যাত্রীদের ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের সরকার নিয়েছে যার সাক্ষী আপনারাই।
সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময়ে দেশে ছিল বিদ্যুতের জন্য হাহাকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের কষ্ট দূর করেছি। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯ হাজার ৭১৩ মেগাওয়াট। মোট জনগোষ্ঠির ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আপনাদের সমর্থন নিয়ে আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেবো ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে, মানুষের মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত, ৬ ভাগের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও মূল্যস্ফীতি ১১ ভাগ থেকে কমিয়ে ৭/৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করে বর্তমানে ১৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, রোজার মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়েছি। এবারের ঈদে কোরবানির পশুর দাম আপনাদের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় ছিল।
সুষ্ঠুভাবে পবিত্র হজ্ব পালনের ব্যবস্থা করেছি।
সমুদ্র বিজয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপুল সমুদ্র সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আরো উন্নত হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের কারণে নিন্দিত ও সমালোচিত হতো, লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যেতো, সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে সারাবিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।
দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেনর, কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছি, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি। দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিরা এখন মাথা উঁচু করে মর্যাদার সাথে চলতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি’র নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশজুড়ে হত্যা-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-লুটপাট-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়েছিল। সেই দুঃসহ দহন-জ্বালার আতংক মানুষকে এখনো তাড়া করে ফেরে। হাওয়া ভবন নামে সরকারের ভিতরে আরেকটি সরকার এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, বিএনপির এই অপকর্মের কারণেই দেশে নেমে এসেছিল ১/১১-এর আরেক যন্ত্রনাময় অধ্যায়। এদেশের মানুষ সেই আতংকের শাসন থেকেও সাহসের সাথে বের হয়ে এসেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উজ্জ¦ল সম্ভাবনার পথ বেয়ে। দেশের মানুষ খেয়ে-পরে শান্তিতে আছে। আইন-শৃংখলার উন্নতি হয়েছে।
বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি না করার, কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করার, মাদরাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করার, নিরীহ পথচারী আর গরীব বাস ড্রাইভারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা বন্ধ করার জন্য তিনি বিরোধীদলের কাছে আমার আহ্বান বলেন, মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কখনোই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অনুমোদন দেয় না। যারা নির্দোষ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করে তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা হবে দোজখ।
কাজেই, ছুরি, দা, খোন্তা, কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তি ও ঐক্যের পথই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। জনতার ওপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কি চান তা সংসদে এসে বলুন। আলোচনা করুন। আলোচনার দরজা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আছে।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি সংলাপে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তার জবাবে তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বললেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশছাড়া করবেন। ৪, ৫ ও ৬ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরের ধ্বংসযজ্ঞ জাতিকে আতঙ্কিত করেছিল। আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছি, নিরাপত্তা দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিলেন। যখন আলোচনায় আমরা রাজী হলাম সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলেন। একবার বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আরেকবার নির্দলীয়, আবার বলছেন হাসিনামুক্ত। নানা অবাস্তব কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
প্রয়োজনে আবারও মুলতবি প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান?
তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান সাহেব নির্বাচন কমিশন গঠন করার আগে সকল রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেছিলেন। বিরোধীদলের নেতা বিএনপি নেত্রী সেই সংলাপে যোগ দিয়েছিলেন। সবার পরামর্শক্রমেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৭৭ টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করেছে। কোনো নির্বাচনেই সরকার হস্তক্ষেপ করে নাই। অনেক নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ’৭২-এর ১ অনুচ্ছেদে সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ষাট দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকিবে না। তবে শর্ত থাকে যে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার ক উপধারায় উল্লেখিত ৯০ দিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় উল্লেখ আছে। ৩ এর (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে নব্বই দিনের হিসাব শুরু হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধানমন্ত্রীর দেয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। ৯০ দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য আমি সব দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেবো। এ ক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে। এ দেশের মানুষ গত ৩৮ বছরে দেখেছে, প্রতিটি নির্বাচকালীন সমযে অশান্ত পরিস্থিতি, হিংস্রতার তা-ব। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই ২০০১ সালে সফলভাবে মেয়াদ পূর্তির পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। এদেশের মানুষ আর হানাহানি চায় না, বিশৃঙ্খলা চায় না। মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য। আসুন, সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করি। তাই, শান্তির পথে আসুন। তিনি দেশবাসীকে আনন্দমুখর পরিবেশে আপনারা ঈদ-উল-আযহা, হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা ও গতকাল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব- প্রবারণা পূর্ণিমা পালনে শুভেচ্ছা জানান।
দেশবাসীর আনন্দ-উৎসবকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করায় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল সংস্থাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, আগামীতেও তারা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একইভাবে কাজ করবেন।
আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন। শেখ হাসিনা আবেগ জড়িত কণ্ঠে তার স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, আমার ঐ ছোট্ট ভাইটি যাকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট যখন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন আমার ছোট্ট ভাইটিকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা ঐদিন মা, বাবা, ভাই, ভ্রাতৃবধূ, আত্মীয়-স্বজন সব মিলিয়ে ১৮ জন পরিবারের সদস্যকে হারাই। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। যদি আপনাদের কোন আপনজন মৃত্যুবরণ করে আপনারা জানেন সেই ব্যথা বেদনা কত কঠিন। পরিবারের সকল সদস্য হারিয়েও সেই শোক-ব্যথা বুকে নিয়ে শুধুমাত্র আপনাদের জন্য, এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কারণ আমার পিতা এদেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালবেসেছেন এবং এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্যই তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। তার একটাই স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশ হবে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল তার স্বপ্ন। তাই আজ আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। দোয়া করবেন। যে গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি তা যেন যথাযথভাবে পালন করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যেন উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।
তিনি বলেন, আমার ছোট্ট ভাইটি যার কোনো অপরাধ ছিল না, মাত্র ১০ বছরের একটি শিশু তাকেও ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। আমি তার জন্য আপনাদের কাছে, আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই।
No comments:
Post a Comment