Sunday 22 December 2013

অবরোধে বিনিয়োগশূন্য হয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত


bank bd
৭১বাংলা:
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে বিনিয়োগের চাকা অচল হয়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। উপরন্তু ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছিল তা ফেরত আসছে না। ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থবিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারা ধরনা দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতের খেলাপিদের ছাড় দিয়েছে। কমিয়ে দেয়া হয়েছে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের সুদহার। সব মিলে ব্যাংকের সামগ্রিক আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয় কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। এক দিকে আয় কমছে, বাড়ছে খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি। অপর দিকে চলছে বিনিয়োগশূন্যতা।
সব মিলে সামনে দেশের ব্যাংকিং খাত মহাসঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর করণীয় বিষয় নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ দেশের সব বেসরকারি ও রাষ্ট্র খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাথে এ বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। বাকি ১৯ টাকা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বিধিবদ্ধ তহবিল হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে বিনিয়োগচাহিদা বেশি থাকলে ব্যাংকগুলো রিজার্ভ তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ স্থবিরতার কারণে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, বর্তমান ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে ৭১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারছে। তবে এর বেশির ভাগই চলতি বিনিয়োগ। নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। এ কারণে প্রতি ১০০ টাকা আমানতের ১০ টাকা বিনিয়োগ করতে না পারায় অলস পড়ে আছে। অথচ এ ১০ টাকা আমানতের ওপর নির্ধারিত হারে ব্যাংকগুলোকে সুদ গুনতে হচ্ছে।
অপর দিকে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তারা ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে নাম লেখাচ্ছেন। আর এভাবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে বাড়ছে মন্দ ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসেবে ১০০ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭০ টাকাই মন্দ ঋণ, যা আদায় অযোগ্য বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, চলতি ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকিং খাতে আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা ছিল ৩২ হাজার ২৭ কোটি টাকা কিন্তু এ সময়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এ ঘাটতি তিন মাস আগে অর্থাৎ গত জুন শেষে ছিল দুই হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৮১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে বলে তারা আভাস পেয়েছেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে বিনিয়োগ স্থবিরতায় তাদের আমদানি রফতানি থেকে এলসি কমিশন আয় কমে গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করায় ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর আরো নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্যয় কমছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়ছে। বাড়ছে ইউটিলিটি বিল ও ভবন ভাড়া। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকগুলোর লোকসান বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে মূলধন ঘাটতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সংরক্ষণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে ১৪ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ডিসেম্বর শেষে এ ঘাটতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমনি পরিস্থিতিতে, ব্যাংকগুলোর সামনের সম্ভাব্য বিপর্যয় কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
৭১বাংলা/ইএম

No comments:

Post a Comment