মেয়াদোত্তীর্ন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নির্বাচনী ভাগ্য নিয়ে যেভাবে খেলা শুরু করেছেন তাতে তার নিজের ও তার পরিবারের ভাগ্য এক গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গেছে। তবে গোঁয়ার্তুমি মনে হলেও শেখ হাসিনারও নির্বাচনী এ ধোঁয়াশা তৈরি করা ছাড়া কোন উপায় নেই বলেই বিশ্লেষকদের ধারনা। একদিকে ক্ষমতায় না থাকলে তার পুরো পরিবারই শুধু নয় দল হিসেবে আওয়ামী লীগও অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। এছাড়া সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হলো এই প্রথমবারের মতো ভারত বাংলাদেশে যেভাবে ঘাঁটি গেড়েছে তা সমূলে উৎপাটনই হবে না, আগামী কত যুগ পরে আবার এমন দখলদারিত্বের মওকা আসবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ভারতের।
শেখ হাসিনা মুলত চাচ্ছেন বিএনপি যেন তার অসামাজিক আচরন ও রাজনৈতিক দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে নির্বাচনী মুখী না হয়। দেশ বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলো কিনা তা নিয়ে তার যেমন মাথা ব্যাথা নেই, তেমনি ভারতও তোয়াক্কা করছে না বিশ্বের অন্য কোন দেশের মতামতকে। আওয়ামী লীগ ও ভারতের দুজনের ভাগ্য বাংলাদেশের ভাগ্যের সাথে একাকার হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে তারা অবশ্যই পরাজিত হবার পরিবেশে আসবে না। আর নিজেকে পরাজিত করার পরিবেশ বানিয়ে শেখ হাসিনাও নির্বাচনের ঝুঁকি নেবেন না।
নির্লজ্জভাবে আরপিও পরিবর্তন করেও শান্তিতে নেই শেখ হাসিনা। যে পরিকল্পনা করে বিএনপিকে ভেঙ্গে নির্বাচন চালানোর ব্যবস্থা করতে এই আরপিও পরিবর্তন তা কোন এক সময় বুমেরাং হতে পারে। বিএনপি থেকে যদি কেউ চলে যায় বা দল ভাঙ্গার মতো রিস্ক নেয় অবশ্যই সে নির্বাচনী আসনের নিশ্চয়তা চাইবে। আসনই শুধু নয় সেই আসনে নির্বাচিত হয়ে আসার নিশ্চয়তারও গ্যারান্টি না থাকলে বিএনপি ভাঙ্গার মত ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব কেউ গ্রহন করবে বলে মনে হয় না। কারন ইতিমধ্যেই বিএনপিতে একটি হিট গ্রুপ তৈরি হয়েছে যারা দলের সাথে চূড়ান্ত কেউ বেঈমানি করলে তাদের জন্য যমদূতের ভুমিকায় অবতীর্ণ হবার সম্ভাবনা প্রবল। তারপরেও আসনে নির্বাচিত হয়ে আসার নিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে কেউ এই ঝুঁকি নিলেও আওয়ামী লীগকেই তাদের নিজেদের অনেক দখলীয় আসন ছেড়ে দিতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে দলের ভেতরে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বিদ্রোহ হবেই। যা সামাল দেয়া শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব হবে না।
জাসদের হাসানুল হক ইনুকে হাতে রাখতে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর মাহবুবুল আলম হানিফকে নিজের দপ্তর থেকে তাড়াতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করলেই এর গুরু রহস্য বোঝা যাবে। নিজ দলের আমির হোসেন আমু আর তোফায়েল আহমেদদের সাইজ করতে গ্রাম থেকে বেয়াদবি করতে সক্ষম হানিফকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সুপারিশে ধরে এনে নিজের দপ্তরে উঁচু পদে বসিয়েছিলেন। সেই হানিফকে নির্বাচনী আসনের জন্যই বিদায় করেছেন এটা ঠিক নয়। প্রথমত দলের এই দুঃসময়য়ে আমু-তোফায়েলদের ম্যাসেজ দিলেন যে তিনি তাদের জন্য প্রয়োজনে আরও অনেককেই বিদায় করে দেবেন তাই তারা যেন শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়ায়। আর দ্বিতীয়ত হলো বেগম খালেদা জিয়াকে অপমানিত করে বক্তব্য দিতে পারঙ্গম ইনুকে ভারতের ইঙ্গিতে কাছে রাখা। কারন ইনু রাজনীতিতে হলো মেইড ইন ‘র’ প্রোডাক্ট।
এখন বিএনপি থেকে সম্ভাব্য ভেগে যাওয়াদের নিয়ে নির্বাচন করতে হলে শেখ হাসিনাকে কমপক্ষে ৮০ টি আসনে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। পক্ষান্তরে জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি এবার ৫০ টি আসনের কম নিশ্চয়তা নিয়ে নির্বাচনে যাবে বলে ভাবার কোন কারণই নাই। এর বাইরে বাম নামের আওয়ামী পদলেহি দলগুলোকে না হলেও ২০ টি আসন দিতে হবে। আর কোন ইসলামী দলকে ভাগিয়ে আনতে হলে ছাড়তে হবে আরও কিছু আসন। আর হিসেবের বাইরেও জিতে যাবে স্বতন্ত্র কিছু ব্যাক্তি। এতে বিরাট ঝুকির মধ্যে ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে শেখ হাসিনা ও তার দল। ইতিমধ্যে তিনি বিদেশ থেকে তার হাইব্রিড পরিবারের সন্তানদের এসএসএফের নিরাপত্তা দিয়ে দেশে আনিয়ে আওয়ামী লীগের সবাইকে জানান দিয়ে দিয়েছেন যে দলের জন্য রাজনীতি বা ত্যাগের কোন মুল্য নেই, তার পরিবারের গোলাম হয়েই থাকতে হবে সবাইকে। এ ম্যাসেজটি ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের ভেতরে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। ভেতরে চলছে ছাই চাপা দেয়া তুষের আগুলের জ্বলন।
শেখ হাসিনা ভুলে গেলেও সত্যি হলো ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পরে আওয়ামী লীগই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো এবং আওয়ামী সংসদও বহাল ছিলো। এরপরেও ভারত নিজের স্বার্থে ৩ রা নভেম্বর ব্রি. জেনারেল খালেদ মোশারফকে দিয়ে একটি অভ্যুথান ঘটিয়েছিলো। এখন শেখ হাসিনাকে দিয়ে যে নির্বাচনী খেলা খেলিয়ে ভারত নিজের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছে তা নিরাপদ ও নিরঙ্কুশ না হলে ভারত আগামীতে তার অনুগত বাংলাদেশী সেনা জেনারেলদের দিয়ে ক্ষমতা দখল করিয়ে নিজেদের ট্রানজিটসহ অন্য সুবিধা গুলো বহাল রাখার চেষ্টা করবে। এতে বাংলাদেশী জনগণের মনোভাব তাদের অনুকুলে রাখতে যদি আরও একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনাও ঘটাতে হয়, ভারত তা করতে একটুও পিছপা হবে না। কারন ভারত প্রথমেই তার সেভেন সিস্টার রক্ষার জন্য যা যা করার তাই করবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের উপরেই ভারতের অখণ্ডতা একাকার হয়ে গেছে।
ভারত নিজের স্বার্থেই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কোন ভাবেই এই অঞ্চলের পুরো দায়িত্ব ভারতের হাতে তুলে দেবে না। কারন উদিয়মান রাশিয়ার সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা মৈত্রী চুক্তি রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের নেই। আর নিজের অখণ্ডতার স্বার্থে ভারত যেকোন সময় চীনের সাথে যেকোন চুক্তি করে ফেললে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে কখনোই আর তার নিয়ন্ত্রন রাখতে পারবে না। এমনতর এক জটিলতার আবর্তে পড়ে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি।
তারপরেও বিএনপির নীতি নির্ধারক মহলের একটি সূত্র জানিয়েছে বিএনপি যাই কিছু বলুক না কেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে চাইলে বিএনপি যেকোন সরকারের অধীনেই নির্বাচনে চলে যেতে পারে। কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে ভারত নিজেই বিএনপি’র কাছে কিছু নিশ্চয়তা চেয়েছে, যা নিশ্চিত হলে ভারতও দাবার ঘুঁটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী কয়েক দিনের ভেতর রাজনীতিতে নতুন পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার সেই নতুন পরিবেশ হলে আওয়ামী লীগ ও ভারতের তৈরি সেটআপ এ নির্বাচন হলে দুই পক্ষের জন্যই হবে ঝুঁকিময় একটি নির্বাচন; যেখানে যারাই পরাজিত হবে আগামীতে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আর একজনের অস্তিত্ব বিপন্নের ভেতর দিয়েই কেবল অখণ্ডতা রক্ষা পাবে ভারতের।
এখন দেখার সময় কে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় কাজ করবে? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি?
No comments:
Post a Comment