Thursday 26 December 2013

গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পরিকল্পিত নাশকতা চলছে? # লগি-বৈঠার তা-বের মাধ্যমে রাজনীতিতে সহিংসতা প্রথম আমদানি করেছে আ’লীগ


শহীদুল ইসলাম : শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি সুযোগসন্ধানী মহল পরিকল্পিত নাশকতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে এর দায়ভার দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ১৮ দলীয় আন্দোলনের উপর চাপাচ্ছে। গাড়িতে আগুন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নানাবিধ নাশকতামূলক কার্যক্রমের সাথে কারা জড়িত তার অনুসন্ধান না করেই বিরোধী দলের উপর দায় চাপানো হচ্ছে এই মানসিকতা থেকেই। সরকার সবচেয়ে বেশি সোচ্চার জামায়াত ও শিবিরের বিরুদ্ধে। অথচ এমন একটি প্রমাণও নেই যে, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত সন্দেহে যারা হাতেনাতে ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কেউ আছে। এতো দীর্ঘ আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের যে হাজারো মিছিল-সমাবেশ হয়েছে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র দূরে থাক দেশীয় বড় রামদা-কিরিচের মতো অস্ত্রও দেখা যায়নি। তারপরও একটি দলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে চলছে একতরফা অপপ্রচার। অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল ও সন্ত্রাসী অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য।
রাজপথের বিক্ষোভমূলক আন্দোলন-সংগ্রামের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল হলো আওয়ামী লীগ। সব আন্দোলন সংগ্রামেই মিছিল, মিটিং, জমায়েত, মাইকিং, পিকেটিং হয়ে আসছে। এটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় ও মাধ্যম। বাংলাদেশ হওয়ার পরও জ্বালাও-পোড়াও ধরনের যেসব আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার প্রায় সব ক’টির অগ্রভাগে ছিল আওয়ামী লীগ। আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন তাও এনেছে এই দলটি। প্রথম দিকের আন্দোলনে রিকশার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হতো, পরে এসেছে রিকশা ভাংচুর, তারপর আসে গাড়ি ভাংচুর, আগুন। আর পুলিশের উপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ইত্যাদি সব সময়কার কর্মসূচিতেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আান্দোলন-সংগ্রামে সহিংসতা এসেছে ১৯৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন থেকে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে ৬ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং লাশের উপর উন্মত্ত নর্তন-কুর্দনের মাধ্যমে রাজনীতিতে চূড়ান্ত সহিংসতার জন্ম দেয় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগ বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতের মিটিং-মিছিল-সমাবেশ যা গণতান্ত্রিক অধিকার বানচালে একের পর এক পরিকল্পিত নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ নিলেও তা মেনে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আটকের পরও ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্তু জামায়াতের প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার যখন জামায়াতকে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের কর্মসূচি পালনে বাধা দিতেই থাকে, তখন কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের বাধা ও হামলার মুখে আত্মরক্ষামূলক কিছু ঘটনা ঘটেছে যা তাৎক্ষণিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত, পরিকল্পিত নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বেশকিছু নিষ্ঠুর ধরনের ঘটনা ঘটেছে যা কারো পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে বা অন্যভাবে গাড়িসমেত মানুষ পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে, যা আন্দোলনের স্বার্থ ও কর্মসূচির সাথে সঙ্গতিহীন। প্রশ্ন এসেছে যে, এসব ঘটনার সাথে জড়িত কারা? পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা এই কাজের সাথে কোনভাবেই জড়িত হতে পারে না। বরং যারা এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায় যারা আন্দোলনের বদনাম করতে চায়, মানুষকে ক্ষেপাতে চায় এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তারাই এই কাজের সাথে জড়িত। সর্বাধিক আলোচিত শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে হত্যার ঘটনা রহস্যঘেরা হলেও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পঙ্কজ দেবনাথের মালিকানাধীন এই বিহঙ্গ পরিবহনে একাধিক ঘটনা ঘটার পরও তার তদন্ত হয়নি, বিচার হয়নি। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এর সাথে কারা জড়িত। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, খুলনায় রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলাসহ অনেকগুলো ঘটনার সাথে জড়িত আওয়ামী ঘরানার লোকেরা হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরায় হিন্দু বাড়িতে হামলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে যুবলীগ নেতা। এভাবে সারা দেশেই নিজেরা নাশকতা চালিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। তারা নিজেরা এসব ঘটিয়ে জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের উপর দোষ চাপাতে চায়। আলোচিত এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, সুপরিকল্পিত। মিছিল, মিটিং বা পিকেটিং-এর সময় বিচ্ছিন্নভাবে ২/৪টি গাড়ি ভাংচুর হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের আলোচিত ঘটনাগুলো সেই ধরনের নয়। ঘটনার ধরন, সরকারি মনোভাব, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ আর তাদের অনুগত মিডিয়ার প্রচারণা একই ধরনের বা একসূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনার পর তদন্ত ছাড়াই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে তড়িঘড়ি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার ও মামলা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি শেষের প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা পর বাংলা মোটরে গাড়ি পোড়ানো এবং তাতে পুলিশ মারার যে ঘটনা ঘটেছে এবং তারপর যতো দ্রুত বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাও আগের ঐ ঘটনাগুলোর মতোই। এতেও বোঝা যায় যে, বিরোধী দলের নেতাদেরকে মামলায় জড়িত করার অসৎ উদ্দেশ্যে এসব নাশকতা চালানো হতে পারে।

No comments:

Post a Comment