Thursday 26 December 2013

পুলিশের বাসে আগুন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ তিন ডজন নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

 রাজধানীর বাংলামোটরে বাসে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ট্রাফিক পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ তিন ডজন নেতার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রমনা থানার এসআই নাজমুল ইসলামের দায়ের করা এ মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ১৮ থেকে ২০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে মামলার এজাহারে ‘উস্কানিদাতা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রওশন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি মামুন হাসান ও ছাত্রদল নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মিন্টুর নামও রয়েছে এজাহারে।
মামলাটির এজাহারেও বলা হয়েছে,  মির্জা ফখরুলসহ আসামীদের উস্কানিতে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ওই নাশকতা ঘটায়।
১৮ দলের পঞ্চম দফা অবরোধ কর্মসূচি বিকেল ৫টায় শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার আগেই মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী ২৯ ডিসেম্বর দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, আগুনে পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ফেরদৌস খলিল (৩৫) নিহত হন। ওই বাসের চালক মোঃ বায়েজিদ (২৫) ও কনস্টেবল ফায়জুল ইসলামও (৪১) দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সালাহউদ্দিন সোহাগ নামে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন, বাসটিতে আগুন জ্বলার সময় মোটরসাইকেলে করে দু’জনকে সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে দেখেন তিনি।
রমনা থানার এসআই নাজমুল ইসলামের দায়ের করা মামলার (নং-৪২) এজাহারেও বলা হয়েছে,  মির্জা ফখরুলসহ আসামীদের উস্কানিতে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ওই নাশকতা ঘটায়। এর আগে নবেম্বরের শেষে শাহবাগ ও মালিবাগে বাসে আগুন দেয়ার দুটি ঘটনাতেও ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের আসামী করা হয়।
গত ২৬ নবেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে তা বাতিলের দাবিতে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছিল ১৮ দল। টানা অবরোধের সময় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
শোক  ........
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল কর্তব্য পালন শেষে বাসযোগে ব্যারাকে ফেরার পথে বাংলামোটর মোড়ে দুর্বৃত্তের নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাত সাড়ে এগারটায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৪২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল ১৯৭১ সালে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার নাগের ভিটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কনস্টেবল পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। মাত্র এক মাস পূর্বে  তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন।
গতকাল বুধবার বাদ জোহর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাযের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল হাসান মাহমুদ খন্দকার, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যবৃন্দ এবং স্বজনরা জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
জানাযা শেষে পুলিশের পক্ষে ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন ডিএমপি কমিশনার পরে পুলিশ এস্কটসহ লাশ তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখা সূত্রে জানানো হয়।

No comments:

Post a Comment