Thursday, 5 December 2013

ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের গোপন সভায় দীপু মনি!


আবুধাবিতে দুই সপ্তাহ আগে ২৯টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের এক সমাবেশে গোপনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসরাইলকে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও পেরেজের এই গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইসরাইলি দৈনিক ‘ইয়েদিয়োথ অহরোনোথ’ সোমবার এ খবর দিয়েছে বলে লেবাননের আল মানার টেলিভিশনের ওয়েবসাইট জানিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের এবং বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল ও আরব লিগভুক্ত ২৯টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন পেরেজ। সৌদি রাজা আবদুল্লাহর ছেলেও ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর বায়তুল মোকাদ্দাস বা জেরুজালেমে নিজ দফতর থেকে বক্তব্য রাখেন পেরেজ। তার পেছনে ছিল ইসরাইলের পতাকা। পেরেজের সামনে মুখোমুখি বসে ছিলেন জাতিসংঘের উপমহাসচিব টি. লারসেন ও ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি আলোচনার বিষয়ে বিশেষ মার্কিন দূত মার্টিন ইন্ডিক। লার্সেন পেরেজকে নানা প্রশ্ন করেন এবং পেরেজ সেসব প্রশ্নের জবাব দেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট পেরেজকে প্রশ্ন করার বা তার উদ্দেশে কথা বলার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
আরব লিগের সব পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশেষ করে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, ইয়েমেন ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে ইসরাইলি দৈনিকটি জানিয়েছে। এছাড়াও সেখানে ছিলেন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও কয়েকটি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই গোপন বৈঠকের আয়োজক-সংগঠকদের আগেই এ শর্তও দেয়া হয়েছিল যে, পেরেজের বক্তব্য ফাঁস বা প্রকাশ করা হবে না এবং কেবল এ শর্তেই তিনি ওই গোপন সভায় বক্তব্য রাখবেন।
দৈনিকটি আরও জানিয়েছে, ‘বৈঠকের আয়োজক ছিল আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট পেরেজকে এ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এমন একটি সময়ে অভিন্ন শত্রু ইরানের মোকাবিলায় ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্কের বা বন্ধুত্বের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।’
এ গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের প্রধান বিশ্লেষক থমাস ফ্রাইডম্যান। তিনি জানিয়েছেন, এ বৈঠকে পেরেজ নানা ইস্যু সামাল দিয়েছেন। পেরেজ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ফ্যাক্টর বা চালিকাশক্তি হতে পারে এবং পারমাণবিক ইরান ও মৌলবাদী ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অভিন্ন লক্ষ্যে সংলাপের একটি সুযোগ রয়েছে।’ এছাড়াও পেরেজ বিশ্বশান্তির ব্যাপারে ওই বৈঠকে নিজের মতামত তুলে ধরেন বলে ফ্রাইডম্যান জানান।
মুসলমানদের প্রথম কেবলা দখল করে রাখা ইহুদিবাদী নেতারা যখন অবৈধ ইহুদি বসতি জোরদারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে জবর দখল পাকাপোক্ত করাসহ নানা ধরনের নৃশংস হামলা আর আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে তখন একটি ইসলামী দেশের অগ্রগতি ঠেকানোর জন্য মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মসহ সব ঐশী ধর্ম এবং মানবতার জাতশত্রু ইহুদিবাদীদের সঙ্গে কথিত মুসলিম সরকারি কর্মকর্তাদের এ বৈঠকের খবর অপ্রত্যাশিত হলেও নজিরবিহীন ঘটনা নয় বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেক স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ইসরাইলের স্বীকৃতি নেয়া দূরে থাক, স্বাধীনতার পর থেকেই ইসরাইলকে দখলদার অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করছে। বাংলাদেশের পাসপোর্টেও ইসরাইলের ব্যাপারে এই নীতির কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছ।
এমনকি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসরাইলের দখলদারির শিকার ফিলিস্তিনকে শুধু সমর্থনই করেননি, দেশটির মুক্তি সংগ্রাম বেগবান করতে আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি ভূমিকা রাখেন। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ইয়াসির আরাফাতের গভীর সম্পর্কও তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাকে সম্ভাষণ জানান।
এর ধারাবাহিকতায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে পরম বন্ধুর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা নিজ নিজ শাসনামলে ফিলিস্তিনিদের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতকে অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখেন। তিনি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন, অসংখ্যবার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করেছেন।
মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ইসরাইলবিরোধী নীতিকে অবজ্ঞা করে দেশটির প্রেসিডেন্টের গোপন বৈঠকে যোগ দেন।
সূত্র : আইআরআইবি

No comments:

Post a Comment