22 Dec, 2013 দেশ আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। জাতীয় জীবনে চলছে ঘোর অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চরম হঠকারিতা ও ক্ষমতালিপ্সার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে স্বৈরশাসকের চেয়েও মারাত্মক একদলীয় শাসন জেঁকে বসেছে জাতির কাঁধে। কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও সমগ্র জাতির প্রতিনিধি বাছাইয়ের অধিকার আজ বিপন্ন। বাক, ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাথীনতা, দল সংগঠন ও রাজনীতির অধিকার এখন দুঃশাসন ও জুলুম নির্যাতনের মুখে সম্পূর্ণ রহিত। অপরাজনীতির বিষবৃক্ষ আজ জাতীয় স্বাধীনতা সাবভৌমত্বের মাহাত্ম্যকে ধ্বংস করছে। বাংলাদেশের উপর চলছে বহিঃশক্তির নানামুখী নগ্ন হস্তক্ষেপ। গণতন্ত্রের পূজারিদের হাতেই গণতন্ত্র নিহত হয়ে এখন পচা লাশের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সংবিধানের ছত্রছায়ায় স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করছে। আন্দোলনের নামে চলছে ইঁদুর বিড়াল খেলা। যৌথবাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের তৎপরতায় দেশপ্রেমিক নাগরিকরা এখন চরম হুমকির মুখে। বিদেশি রাজাকার, এজেন্ট ও দালাল বুদ্ধিজীবীদের সীমাহীন বাড়াবাড়ি থেকে জনমনে নানা সংশয় দানা বাধছে। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদদের অপতৎপরতা অব্যাহত গতিতে চলছে। খোদাদ্রোহী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকার কিছুতেই নিবৃত হচ্ছে না। রাজনীতির নীতিহীন অনুশীলনের ফলে দেশ আজ সংঘাতময় পরিস্থিতির শিকার। মানুষ প্রাণ দিচ্ছে, ধন-সম্পদ ও জীবন-জীবিকার সকল উপাদান জ্বলে পুড়ে ছাই। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় দেশের বৃহত্তর অরাজনৈতিক দেশপ্রেমিক শক্তি হেফাজতে ইসলাম নীরবে বসে থাকতে পারে না। জাতির এ সংকটময় মুহূর্তে ইসলাম, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নাগরিকদের জান-মাল ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে সমঝোতায় আসার বিকল্প নেই। গতকাল হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাপলা চত্বরে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রত্যয় ব্যক্ত করে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতারা জানিয়েছেন, কোন অপশক্তি তাদের কর্মসূচি বানচাল করতে পারবে না। সকল বাধা মোকাবিলা করে যেকোন মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য সারাদেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
হেফাজত নেতারা বলেন, দেশে বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, একদলীয় ক্ষমতাকেন্দ্রিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ, মহানবীকে (সা.) নিয়ে অনলাইন ব্লগে নতুন করে কটূক্তি, তাফসীরুল কুরআন মাহফিল, ওয়াজ মাহফির, ইসলামী সম্মেলনে বাধাদানের প্রতিবাদ, মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি সাখাওয়াত, মুফতি হারুন ইজহারসহ গ্রেফতারকৃত হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নেতারা বলেন, হেফাজত কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে না। কাজেই বিরোধী দলের চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি আর আমাদের ঈমানী কর্মসূচি এক নয়। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণভাবে হেফাজতের প্রতিটি কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে দেশের ধর্মপরায়ণ মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করেছে।
নেতারা আরো বলেন, তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের গুটি কয়েক নাস্তিকের জন্য জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়ে পড়ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর সন্ত্রাসী হুমকি আসছে। বিভিন্ন মৌসুমে এদের উত্তাপ দেখা গেলেও সীমান্তবর্তী জায়গায় শত শত কারখানা তৈরি করে বাংলাদেশে ফেনসিডিল বিক্রি, কূটকৌশল করে বাংলাদেশের সম্পদ ও সুযোগ লুট, অসংখ্য বাধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানো, একতরফা বাণিজ্যিক আগ্রাসন ও বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত মানুষ হত্যাসহ এদেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ গত ৪৩ বছর যে লুটপাট চালিয়েছে, তার বিরুদ্ধে নব্য দেশপ্রেমিকদের কোনো কর্মসূচিই আমাদের চোখে পড়েনি। আমরা অবিলম্বে দেশ ও ইসলামের স্বার্থে গণজাগরণ মঞ্চসহ সকল এজেন্সি বন্ধ ও স্বার্থান্বেষী তৎপরতা নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। এই দেশ ইসলাম, মুসলমান ও প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের। আন্দোলনের নামে নির্লজ্জ দালালিতে মত্ত নাস্তিকদের কোনো বিশৃঙ্খলা এদেশের ধর্মপরায়ণ মুসলমানরা সহ্য করবে না।
হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরী আহবায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন,
চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান, সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুন:স্থাপন ৫ মে শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত আলেম-ওলামাদের অবিলম্বে মুক্তি, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধসহ ১৩ দফা ঈমানি দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কর্তৃক ঘোষিত আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ সফল করা প্রতিটি ঈমানদার মানুষের ধর্মীয় দায়িত্ব।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে আমাদের এ প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে চলেছে তাও আপনাদের কারো অজানা নয়। দেশজুড়ে ব্যাপক তা-ব, হানাহানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই তা-ব ও সহিসংসতার মাত্রাও এতো ভয়াবহ যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করছে প্রতিনিয়ত। আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হচ্ছে ব্যক্তিগত রাষ্ট্রীয় বহু সম্পদ। থমকে গেছে দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-। চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটা ছাড়াও হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে হাজারো মায়ের সন্তান। কোমলমতি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন। মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আন্ত:যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। দেশের এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, জনসাধারণের জান-মালের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি দেশবাসী আর দেখতে চায় না। তাই এহেন অসহনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে যে কোনো মূল্যে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
এক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, বিরাজমান সংকট যেহেতু নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিক ভাবে শান্তিপূর্ণ পন্থায় এর সমাধান বের করতে হবে এবং এর প্রধান ভূমিকা সরকারকেই পালন করতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানচ্ছি দমন-নিপীড়ন ও যাবতীয় বলপ্রয়োগের নীতি এবং সংঘাত-সহিংসতার পথ পরিহার করে দ্রুত সমঝোতার পথ গ্রহণ করতে হবে একং অসহিংস, শান্তিপূর্ণ পন্থায় দেশ ও জাতির মঙ্গল ত্বরান্বিত করতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের চেতনা বিশ্বাস ও আশা আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হবে; এটাই স্বাভাবিক যুক্তির দাবি। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক চেতনা বিশ্বাসের দিক থেকে মুসলমান। আর মুসলমান মাত্রই যাবতীয় কাজে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ লালন করে। সুতরাং শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের সংবিধানের ভিত্তি ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-এর ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই যুক্তিসঙ্গত বাস্তবতা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ অংশটিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গুটি কয়েক নাস্তিক-মুরতাদের পরামর্শে বিলুপ্ত করা হয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের চেতনা বিশ্বাসের প্রতি কোনরূপ তোয়াক্কা না করে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
সুতরাং আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য হল, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ অংশটি -যা সংবিধানে সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা বর্তমান সংসদের মাধ্যমেই সংবিধানে পুনঃস্থাপন করতে হবে।
আপনারা নিশ্চয় ভুলে যাননি, বিগত ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে মিডিয়াকে সরিয়ে দিয়ে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, রাতের অন্ধকারে নবীপ্রেমিক জনতার ওপর যৌথবাহিনী দিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকা- চালানো হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ওই রাত্রে নামাযরত, জিকিররত ও ঘুমন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামার ওপর এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। এই আক্রমণে অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, হাফেযে কুরআন, মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে শহীদ করা হয়েছে। অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে গেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকারদলীয় ক্যাডার, শাহবাগী নাস্তিক মুরতাদদের দোসররা নৃশংস হামলা চালিয়েছে। অথচ উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অর্ধশতাধিক মামলা দিয়ে হয়রানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মুকাররম ও আশপাশ এলাকায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের দ্বারা অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত আক্রমণ করে, অগ্নিসংযোগ করে, পবিত্র কুরআন পুড়িয়ে এবং দোকানপাট লুটপাট করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সরকারের নেতা মন্ত্রীরা এ নির্লজ্জ অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালিয়েছেন।
চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান, সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন ৫ মে’র গণহত্যার স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, আল্লামা মুফতী ওয়াক্কাস, মুফতী হারুন এজহার ও মুফতী সাখাওয়াতসহ গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামাদের অবিলম্বে মুক্তি এবং দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে আল্লামা আহমদ শফী কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচি হিসাবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গল বার শাপলা চত্বরের সমাবেশ বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাও: জাফরুল্লাহ খান, মাও: আব্দুর রব ইউসুফী, ড: আব্দুল কাদের, মুফতী মাহফুজুল হক, মুফতী তৈয়ব হোসাইন, মাও: মহিউদ্দিন ইকরাম, মাও: আবুল হাসানাত, মাও: ফজলুল করীম কাসেমী, মাও: সাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ বলেন, গত ৫ ও ৬ মে সরকারী বাহিনী ও ক্যাডারদের নজিরবিহীন তা-বের পর থেকে হেফাজত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। অরাজনৈতিকভাবে জাতির প্রতিটি সংকটে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সীমাহীন হঠকারিতা ও রাজনীতিকদের চরম ব্যর্থতা দেখে দেশবাসী হতবাক। ঈমান, ইসলাম ও স্বাধীনতা নিয়ে চলছে মারাত্মক সব চক্রান্ত। দেশ ও জাতির শান্তি, সৌহার্দ্য ও সামাজিক স্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থার শিকার। বাংলাদেশে ইসলাম, ঈমান, স্বাধীনতা ও সম্মান নিয়ে মুসলমানরা বসবাস করতে পারবে কিনা এটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় ইসলাম ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির মোকাবিলায় নিজেদের সকল সামর্থ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানী দায়িত্ব। অন্যায়, অসত্য, জুলুম, নির্যাতন, খোদাদ্রোহিতা ও ইসলামবিদ্বেষী কার্যকলাপ রুখে দাঁড়ানো মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ দায়িত্বের আহবানে সাড়া দিয়ে হেফাজতে ইসলামের বহু কাক্সিক্ষত এই সমাবেশ সফল করতে দেশের লাখো তৌহিদী জনতা প্রস্তুত। নেতৃবৃন্দ ২৪ তারিখ বিরোধী দলের অবরোধ তুলে দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সরকারকেও বলব, তারা যেন ঈমানী আন্দোলনের পথে বাধা সৃষ্টি না করেন। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে গণসংযোগ শেষ করেছি। বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে বৃহত্তর ঢাকা জেলা ও আশপাশের এলাকায়। যে কোন মূল্যে এ সমাবেশ আমরা সফল করবই ইনশাআল্লাহ। জানা গেছে, রাজধানীর ৬টি পয়েন্ট দিয়ে ২৪ তারিখে ফজরের পর থেকেই হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ নগরীতে প্রবেশ করবেন। শান্তির সাদা পতাকা, জাতীয় পতাকা, তসবিহ, রুমাল, জায়নামাজ নিয়ে। ছাত্র-যুবক-জনতা বেলা দশটার আগেই শাপলা চত্বরে অবস্থান নেবেন। কণ্ঠে থাকবে তাদের আল্লাহর নামের জিকির ও দেশাত্মবোধক শ্লোগান। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মূলবক্তব্য রাখবেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী। আলোচনা করবেন জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তিন দিন আগে থেকেই লোকজন রওনা হবেন। ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এলাকার মানুষ ২টি মূল পয়েন্টে সমবেত হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করবেন। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ থেকে কাফেলা এসে দু’টি পয়েন্টে জমা হয়ে নির্দিষ্ট পথে ঢাকায় ঢুকবে। নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ থেকে দু’টি পথে কুমিল্লা ও পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলের কাফেলা দু’টি পথে রাজধানীতে প্রবেশ করবে। রেলপথ ও নৌযানের যাত্রীরা নির্দিষ্ট পথগুলো দিয়ে সমাবেশ স্থলে আসবে। এ উপলক্ষে মুসল্লিদের শৃংখলা, সেবা ও নিরাপত্তার জন্য রাজধানীতে ১৯টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। শত শত স্বেচ্ছাসেবী নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবেন। সমাবেশের দিনসহ আগের তিনদিন। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নানা কৌশলগত দিক পর্যবেক্ষণ ও তরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ধর্মপ্রাণ নাগরিক ও নানা শ্রেণীপেশার প্রভাশালী লোকদের সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির আঞ্চলিক শাখাগুলো গঠন করা হয়েছে। মহাসমাবেশে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অভ্যর্থনা, নিরাপত্তা ও সেবার জন্য ১৯টি জোনেই শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment