Friday, 25 October 2013

পিছু হটলেন সৌদি নারীরা



 সরকারি ফতোয়ার মুখে পিছিয়ে গেলেন সৌদি নারীরা। গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভে নামতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সরকারি ফতোয়ার মুখে পিছিয়ে গেলেন তাঁরা। সৌদি সংবাদ সংস্থার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
 
তবে গাড়ি চালানো অধিকার ফিরে পেতে উদগ্রিব মেয়েরা আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে নিয়ম ভাঙলেই কড়া শাস্তি।  এই হুমকির মুখেই শনিবার আন্দোলন করবেন না তারা।
 
আন্দোলনকারী নাজলা আল-হারিরি বললেন, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তাকে সম্মান জানিয়ে মেয়েদের কাল স্টিয়ারিং ধরতে নিষেধ করেছি। বরং পরবর্তীতে এই আন্দোলন লাগাতার করা হবে।
 
সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা-শাস্তি-বিক্ষোভ, নতুন কিছু নয়। প্রতিবাদ স্বরূপ ২০১১ সালে গাড়ি চালিয়ে ইন্টারনেটে ছবি পোস্ট করেছিলেন মানবাধিকার কর্মী মানাল আল-শরিফ। পরিণামে সপ্তাহ খানেক জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। মানালের মতো মেয়ের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে আরবে। গত সেপ্টেম্বরেও এক বার অনলাইন আন্দোলন শুরু হয়। সমর্থনে ১৬ হাজার স্বাক্ষর জমা পড়ে অনলাইনেই। তাতেই গতি পায় ২৬ অক্টোবরের আন্দোলন।
 
মেয়েদের এই বেপরোয়া আচরণে মাথায় হাত পড়েছিল প্রশাসনের। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নোটিস জারি করা হয়েছে, মেয়েরা গাড়ি চালালেই কঠিন শাস্তি।
 
আন্দোলনে যুক্ত কয়েক জন মহিলার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকে হুমকি-ফোন আসতে শুরু করেছে তাঁদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলারা জানিয়েছেন, ফোনের ও পারে যারা ছিল, তারা মন্ত্রীর লোক। নাম ভাঁড়িয়ে ভয় দেখাচ্ছে তারা।
 
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মানসুর আল-তুর্কি প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। পরে তিনি জানান, বুধবার সরকারি ভাবে নোটিস দেয়া হয়েছিল, ২৬ তারিখ পথে নেমে সমাজের শান্তি-ভঙ্গ করলেই শাস্তি। সেটাই শুধু ফোন করে বোঝানো হয়েছিল ওই মহিলাদের।
 
আল-তুর্কি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ফোন করে কয়েক জন মহিলাকে গাড়ি না চালানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো হুমকি ছিল না। সরকারি নোটিস সম্পর্কে ওঁরা যাতে অবগত হন, সেটাই শুধু নিশ্চিত করা হয়েছে। তুর্কি পরে এ-ও জানান, কেউ যদি অনলাইন প্রচারেও যোগ দেয়, সাইবার-অপরাধে তার পাঁচ বছর জেল হবে।
 
আল-তুর্কির ‘হুমকি’কে অবশ্য শাপে বর ভাবছেন মানাল আল-শরিফ। তাঁর কথায়, এত দিন ওরা গোটা দুনিয়াকে বলে বেড়াত, মেয়েদের গাড়ি চালাতে দেয়া হবে কি না, সেটা সৌদি সমাজের সিদ্ধান্ত। কিন্তু সরকারি প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মানালের মতে, দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিলাম। এখন আমরা জানি, কোন পরিস্থিতিতে বাস করছি। তাঁদের বক্তব্য, সৌদি আরবে কিন্তু এমন কোনো আইন নেই, যাতে মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। ধর্মীয় সংগঠনগুলোই ফতোয়া জারি করে রেখেছে।
 
সম্প্রতি গাড়ি চালিয়ে জেড্ডা যাওয়ার ভিডিও ইন্টারনেটে পোস্ট করেছিলেন তামাদোর আলইয়ামি। আহ্বান জানিয়েছিলেন এই দিনের সুযোগটা নিতেই হবে। ‘একদিন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় এক পুলিশ অফিসার আমায় দেখতে পান। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, উনি আমার পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন। খুব আনন্দ হয়েছিল। সে দিনই ঠিক করেছিলাম, ২৬ তারিখ বেরোবই বেরোব। ’ তবে আলইয়ামির ইচ্ছে পূরণ হল না।

No comments:

Post a Comment