শুধুমাত্র ইসলামী রাজনীতি করার কারণেই আব্দুল কাদের মোল্লা আজ একপা দুপা করে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাছেন!-

আব্দুল কাদের মোল্লা একটা নাম, একটা জীবন্ত ইতিহাস। তিনি মেধাবী একজন ছাত্র হিসেবে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনিষ্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ফরিদপুরের বিখ্যাত রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ১৯৬৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ন হন। ১৯৬৮ সালে তিনি একই কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কারনে ১৯৭১ সালে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা না দিয়ে ১৯৭৫ সালে তিনি সামাজিক বিজ্ঞানে শিক্ষা প্রশাসনের ডিপ্লোমায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে আবার ১৯৭৭ সালে শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন।
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এম,এড পরীক্ষার রেজাল্টের পরে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন এবং পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ সংস্কৃতি কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে রিসার্স স্কলার হিসাবে বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টারে যোগ দেন। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে মোল্লা দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে সাংবাতিকতার সাথে যুক্ত হন। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে সে পরপর দুই বছর ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডি ইউ জে) এর সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালেই তিনি কম্যূনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পর মাওলানা মওদূদী(রঃ) লিখিত তাফহীমুল কুরআন পড়ে আলোকিত জীবনের সন্ধান পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে তিনি ছাত্রসংঘের তৎকালিন পূর্বপাকিস্তান শাখায় যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি এ সংগঠনের সদস্য হন। ছাত্রসংঘের শহিদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশব্বিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারী ও একই সাথে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রইউনিয়ন তাকে রাজনীতি শিখাল অথচ তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র সঙ্ঘে এবং ১৯৭৭ সালের মে মাসে জামায়াতে যোগ দেন এবং ১৯৭৮ সালের নভেম্বর মাসে রুকন হন যা বাতিলের মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ। ধিরেধিরে তিনি গোলাম আযমের ব্যাক্তিগত সেক্রেটারি এবং ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য ও কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অল্পদিনের ব্যাবধানেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশ-এ-শূরার সদস্য হন। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারী ও পরবর্তীতে ঢাকা মহানগরীর নায়েব-এ-আমীর এবং ১৯৮৫ সালে তিনি ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রিয় কর্মপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ২০০০ সালে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলে হিসেবে মনোনীত হন। উক্ত দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি চারদলীয় জোটের লিয়াজো কমিটির গুরুত্বপূর্ন সদস্য হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।
মোল্লাকে বিভিন্ন মেয়াদে চার চারবার জেলে যেতে হয়। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়ে ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মত তিনি বাম রাজনীতিক হিসেবে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭২ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন কিন্তু স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন কাস্টোডী থেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়! জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারনে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আবারও আটক করে রাখা হয়। পরে উচ্চ আদালত তার এ আটকাদেশকে আবৈধ ঘোষণা করলে চারমাস পরে তিনি মুক্ত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করায় তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তাকে আটক করে।
মোল্লা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত। যার মধ্যে বাদশাহ ফয়সাল ইন্সটিটিউট, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোসাইটি ও এর স্কুল, সদরপুর মাদরাসা ও এতিমখানা, ফরিদপুর জেলার হাজিডাঙ্গি খাদেমুল ইসলাম মাদরাসা ও এতিমখানা, সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী একাডেমী অন্যতম। এছাড়াও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন।
মোল্লা দেশ বিদেশের সমসাময়িক বিষয়ের উপর একাধিক কলাম ও প্রবন্ধ লিখেছেন। ইসলামের বিভিন্ন দিকের উপরো তার লেখা পাওয়া যায়। তার লেখা কলাম ও প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বস্তুবাদ ও কম্যূনিজমের উপরে তার বৈজ্ঞানিক সমালোচনা শিক্ষিত মহলের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
মোল্লা ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছেন যার মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান ও ভারতে ভারত অন্যতম।
এহেন বর্নাড্য জীবনের অধিকারী একজন ব্যাক্তিকে শুধুমাত্র ইসলামী রজনীতি করার কারণেই আজ একপা দুপা করে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে হছে! তিনি যদি সত্যিকারেই যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন, উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতা, রাইফেলস কলেজে অধ্যাপনা এমনকি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করতে পারতেন না। দেশের গুণীজনদের আড্ডাখানা প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক ঢাকার সাংবাদিকদের প্রেস্টেজিয়াস ইউনিয়ন, ‘ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডি ইউ জে)’ এর পরপর দুই মেয়াদ ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে সহসভাপতি নির্বাচিত হতে পারতেন না। তিনি যে যুদ্ধাপরাধী না তার অন্যতম প্রমাণ হল যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার, আল বদর, আল শামস হিসাবে কোন তালিকায় তার নামতো দূরের কথা সন্দেহ ভাজনের তালিকায়ও নাম ছিলনা। এমনকি এধরণের অপরাধে তাকে কেউ ইতিপূর্বে অভিযুক্তও করেনি। এমন একজন নিষ্কলুষ ব্যক্তিকে নিয়ে শুধু মাত্র রাজনীতির কারনেই এই মরণ খেলা।
সরকার মনে করছে এই মরণ খেলা খেলে এবং অবৈধ চাপ প্রয়োগ করে জামায়াতকে কাবু করা যাবে কিন্তু তথ্য বাবার সে আশায় গুড়ে বালি। যারা নিজের মাথা পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে তারা দুনিয়ার কোন অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনা। তথ্য বাবাদের কাছে ইসলামী আন্দোলনের কোন নেতা তো দূরের কথা কোন সমর্থকও নতি স্বীকার করবেনা ইনশা’আল্লাই।
ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের দৃঢ় মনোবলের কাছে শেষ পর্যন্ত ধর্মহীন সেকুলারদের পরাজিত হতেই হবে ইনশা’আল্লাহ। ক্ষণিকের জন্য হয়ত প্রবল চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, কিছু নিরপরাধ মানুষকে খুণ করতে পারবে, তবে তাতে অঙ্কুরেই তথ্য বাবার হাত রক্তে রঞ্জিত হবে, যা তার নানা করেছিল পরিণত বয়সে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় তার নানা যেখানে ক্ষমতা চর্চ করতে গিয়ে সিরাজ শিকদারের রক্তে নিজের হাত রঞ্জিত করে জাতির কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিল সেখানে রাজনীতির মাঠে হাতি খড়ি নিতে না নিতেই তথ্য বাবা কলঙ্কিত হবে। সে ক্ষেত্রে তাকে বাংলার জনগণ তার নানার আসনে বসাবে নাকি ইসলাম বিদ্বেষী ভিনদেশী দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে তা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছু দিন আপেক্ষা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment