Saturday, 26 October 2013

সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া সিদ্ধান্ত ॥এটা অবৈধ অসাংবিধানিক





 গতকাল শনিবার আইইবি মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত নাগরিক সংলাপে বক্তব্য পেশ করেন সাবেক উপদেষ্টা ড. এম আকবর আলী খান-সংগ্রাম

* রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীই দায়ী -ড. বদিউল আলম মজুমদার

* সরকার অর্ধসত্য কথা বলেন -ড.আকবর আলি খান

* প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন -এম হাফিজ উদ্দিন খান

* জনগণ সিদ্ধান্ত নিলে প্রধানমন্ত্রীকে চলে যেতেই হবে -আ স ম আব্দুর রব

* ক্ষমতাসীন দল সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দলীয়করণ, লুটপাটে রেকর্ড করেছে -মান্না



স্টাফ রিপোর্টার : ‘উদ্ভূত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে করণীয়’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার জন্য সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীই দায়ী। তারা বলেন, ১৫তম সংশোধনী সংসদীয় বিশেষ কমিটির সুপারিশে হয়নি। এটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া সিদ্ধান্তে। তাই এই সংশোধনী অসাংবিধানিক ও অবৈধ।

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রমুখ।

সেমিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার জন্য সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ১৫তম সংশোধনী সংসদীয় বিশেষ কমিটির সুপারিশে হয়নি। এটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া সিদ্ধান্তে। তাই এই সংশোধনী অসাংবিধানিক ও অবৈধ।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সম্মিলিকভাবে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গণতন্ত্র খাদে পড়তে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এর কারণ খুঁজতে চাই তাহলে পাবো এর জন্য দায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের অনড় অবস্থান। এই অনড় অবস্থানে জন্য দায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি ১৫তম সংশোধনীর বিভিন্ন পর্যায় তুলে ধরে বলেন, ২০১০ সালের ২১ জুলাই প্রথম ১৫ জন সদস্য নিয়ে সংবিধান সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। তারা ২৭টি মিটিং করে। মিটিং শেষে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়।

তিনি সংবিধান সংশোধনী কমিটির বিভিন্ন সদস্যদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন এটা সেটল ইস্যু এটা পরিবর্তন করার দরকার নেই। আমির হোসেন আমু বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে আছে সেভাবেই রাখা উচিত। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছিলেন সংবিধানে তিন মাস নির্দিষ্ট করে দেয়া যেতে পারে। এডভোকেট আমীর খসরু বলেছিলেন এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা বিতর্ক সৃষ্টি করে। রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক পরিবর্তনের দরকার নেই। বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সংশোধনের দরকার নেই। কমিটির কো-চেয়ারম্যান প্রস্তাব করে বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার দরকার নেই।

তিনি বলেন, কিন্তু ২৭ এপ্রিল ২০১১ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংবিধান সংশোধন কমিটি দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন জনগণ আর অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেখতে চায় না। ১০ মে কমিটি আবার বলে শর্তসাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ২৯ মে সংবিধান সংশোধনী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে সুপারিশ করে। ৩০ মে কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে সবকিছু উল্টে যায়, সবকিছু বদলে যায়। ২০ জুন কমিটি নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে। ২৫ জুন ২০১১ তা কেবিনেটে ও ৩০ জুন সংশোধনীতে তোলা হয়।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা আমার বক্তব্য নয়। এটা সংকটের ধারাবাহিক সৃষ্টির প্রক্রিয়া। এটা স্পষ্ট সংকট এক ব্যক্তির মনগড়া সিদ্ধান্তে হয়েছে। তাই এই সংশোধনী অবৈধ। সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদ যা অপরিবর্তিত রাখার বিধান করা হয়েছে এটাও অসাংবিধানিক।

 ড. আকবর আলি খান বলেছেন, সরকার আসলে মিথ্যা বলে না, অর্ধসত্য কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রে তো দলীয় প্রধান সরকার প্রধান হতে পারেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

আকবর আলি খান বলেন, সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থায় অংশ নেয়া মন্ত্রীদের অবশ্যই ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে তারা কিছু করতে পারবে না। তিনি বলেন, এ জন্য রুলস অব প্রসিডিউর ঠিক করতে হবে। এছাড়া মন্ত্রীরা যেহেতু প্রজাতন্ত্রের লোক হবে তাই তাদের দলীয় পদ না থাকলেই ভালো হবে। কেননা, দলীয় পদধারী ব্যক্তি তো তার দলের বাইরে কিছু করবে না।

সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বসে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, বড় দুই দলের মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একে অন্যের মতামত নেয়, রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশে একটা কিছু হবে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে যা হবে তা কারো জন্যই মঙ্গল হবে না। তিনি বলেন, দেশের যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি। এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। একতরফা নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা দরকার জনগণ সিদ্বান্ত নিলে আপনাকে চলে যেতেই হবে। তিনি বলেন, বৃটিশ-পাকিস্তান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারেনি, আপনিও পারবেন ন। দেশে সংঘাত অনিবার্য। আর এজন্য দায়ী প্রধামন্ত্রীর জেদ।

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ক্ষমতাসীন দল সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দলীয়করণ, লুটপাটে রেকর্ড করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে নিজেদের ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment